joybangladesh.tv
Sunday, June 8, 2025

নতুন মোড় নিচ্ছে ঢাকা-দিল্লির সম্পর্ক !

Share

জেবি টিভি রিপোর্ট : বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার গঙ্গা চুক্তিবিষয়ক যৌথ কমিটির ৮৬তম বৈঠকের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। গঙ্গা-পদ্মা পানি বণ্টন চুক্তি পর্যালোচনা এবং নদীসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে ঢাকার ১১ সদস্যের এক প্রতিনিধিদল পাঁচ দিনের সফরে গত সোমবার ভারতের কলকাতায় পৌঁছায়। ঢাকা ও দিল্লির কূটনৈতিক সূত্রে

জানা গেছে, যৌথ নদী কমিশনের তত্ত্বাবধানে বিশেষজ্ঞ কমিটির ৮৬তম বৈঠকের অংশ হিসেবে বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা গত সোমবার দুপুরেই কলকাতা থেকে ফারাক্কা বাঁধ পরিদর্শনে সেখানে যান। গতকাল মঙ্গলবার তারা ফারাক্কা বাঁধ এলাকা পরিদর্শন করেন। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন নয়াদিল্লি থেকে আসা দেশটির কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা। দুই প্রতিনিধিদলে কারিগরি বিশেষজ্ঞরা ছাড়াও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা রয়েছেন।

ফারাক্কা পরিদর্শন করে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের প্রধান মোহাম্মদ আবুল হোসেন জানিয়েছেন, সম্প্রতি ফারাক্কায় নাব্য কমে গেছে। গত জানুয়ারি মাসে ঠিক ছিল, কিন্তু ফেব্রুয়ারিতে কিছুটা কমে গেছে। এভাবে পানি কমে যাওয়া স্বাভাবিক। কোনো বছর পানি কম থাকবে, আবার কোনো বছর বেশি থাকবে। এক প্রশ্নের জবাবে আবুল হোসেন বলেন, পানি বণ্টন চুক্তি বাস্তবায়ন হচ্ছে। এর মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনা করবে বিশেষ কমিটি। তিনি আরও বলেন, এখানে পরিদর্শনের পর কলকাতায় রুটিন বৈঠক হবে।

এদিকে ঢাকা-দিল্লির চলমান উত্তেজনার মধ্যেই বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্তের কাছে নজরদারি ড্রোন ওড়াচ্ছে বলে দাবি করেছে ভারতীয় বার্তাসংস্থা এএনআই। তারা দেশটির প্রতিরক্ষা সূত্রের উদ্ধতি দিয়ে এক প্রতিবেদনে এমন দাবি করেছে। প্রতিবেদনে বার্তাসংস্থাটি জানিয়েছে, বাংলাদেশ তুরস্কের তৈরি টিবি-টু বায়রাক্টার ড্রোনগুলো হাতে পেয়েছে এবং নজরদারি কর্মকাণ্ডের জন্য ভারতীয় সীমান্তের কাছাকাছি সেগুলো পরিচালনা করছে।

প্রতিবেদনে আরও দাবি করা হয়েছে, ভারতীয় প্রতিরক্ষা সূত্রগুলো এএনআইকে জানিয়েছে— ভারতীয় সংস্থাগুলো এসব ড্রোন উড্ডয়ন করতে দেখেছে এবং সেগুলোকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। সূত্র জানিয়েছে, এসব ড্রোনকে গত কয়েক মাস ধরে নজরদারি অভিযান পরিচালনা করতে দেখা গেছে এবং ভারতের সীমান্ত বরাবর তাদের (বাংলাদেশের) নিজস্ব অঞ্চলের ভেতরে উড়ছে। এ অবস্থায় যাবতীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে ভারত। এরই অংশ হিসেবে বাংলাদেশের কার্যক্রম কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করতে তারা রাডার স্থাপন করেছে।

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ঢাকা-দিল্লি কূটনৈতিক সম্পর্কের বর্তমান শীতল সময়ে যৌথ নদী কমিশনের এ বৈঠক ঘিরে দুই দেশের সম্পর্কের বিষয়টি আবারও আলোচনায় এসেছে। দুই দেশের পক্ষ থেকেই বলা হচ্ছে, গত বছর ৫ আগস্টের প্রেক্ষাপটের পর বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস দায়িত্ব নিলে ঢাকা-দিল্লির কূটনৈতিক সম্পর্ক গত ৫৩ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অস্বাভাবিক হয়। ঠিক তার আগে শেখ হাসিনার ১৬ বছরের শাসনামলে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক ছিল সবচেয়ে উষ্ণতম।

বলা হচ্ছে, গত সাত মাসে সীমান্ত হত্যা, সীমান্তে উত্তেজনা, শেখ হাসিনাকে ভারতে আশ্রয় দেওয়া, তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে দুই দেশের মধ্যে শুধু দোষারোপই নয়, সীমান্তে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়াসহ উত্তপ্ত পরিস্থিতির ঘটনাও ঘটেছে। একাধিকবার দুই দেশের কূটনীতিককে সতর্ক করার ঘটনা ঘটেছে। গত বছর আগস্ট থেকে বাংলাদেশিদের জন্য ভারত ভ্রমণভিসাসহ অন্যান্য ভিসা বন্ধ করেছে। শেষ পর্যন্ত চিকিৎসাসহ বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে স্বল্প আকারে ভিসা চালু করে দিল্লি। কিন্তু শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে দুই দেশের সরকারের মধ্যে কোনো আলোচনা বা সমাধান আসেনি। এর মধ্যে তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যার বিষয়টি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তোলা হয়েছে। তাতেও কোনো পক্ষই আলোচনার টেবিলে বসেনি।

তবে ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে দুই দেশের সরকারের পক্ষ থেকেই ইতিবাচক মনোভাবের কথা বলা হচ্ছে। ফলে ইন্দো-বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশনের এ বৈঠক ঘিরে কূটনৈতিক সম্পর্কের শীতলতা কাটার একটা ইঙ্গিত বলে মনে করছেন কূটনীতিকরা। যদিও ভারতীয় গণমাধ্যমে দেশটির সরকারের বরাতে প্রকাশিত প্রতিবেদন বলছে, যেকোনো কারণেই হোক দুই দেশের প্রতিনিধিদের মধ্যকার পাঁচ দিনের এ বৈঠক গুরুত্বপূর্ণ। তবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে একই অবস্থান প্রকাশ পেয়েছে দিল্লির সরকারি কর্মকর্তাদের বক্তব্যে।

তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দিল্লির সরকারি কর্মকর্তারা মনে করে- বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার যেহেতু গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত কোনো সরকার নয়, তাই তাদের সঙ্গে রাজনৈতিক কোনো আলোচনাতে যাওয়ারও প্রশ্ন ওঠে না। অর্থাৎ তারা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সরকারের সঙ্গে এমন কোনো সমঝোতায় যাবে না, যেখানে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রশ্ন আছে। এসব পরিস্থিতি বিবেচনায় কূটনৈতিক পর্যবেক্ষক ও বিশ্লেষকরা মনে করে, গঙ্গা চুক্তি নিয়ে দুই দেশের যৌথ কমিটি মুখোমুখি বৈঠকে বসছে এবং সরেজমিনে ফারাক্কা ব্যারাজ পরিদর্শন করতে পারছে, এটা অবশ্যই তাৎপর্যপূর্ণ। বলা হচ্ছে, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সবুজ সংকেতের পরই এ বৈঠকের প্রস্তুতি নেওয়া হয় এবং বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। এ বৈঠকের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, ১৯৯৬ সালে স্বাক্ষরিত ঐতিহাসিক গঙ্গা চুক্তির ৩০ বছরের মেয়াদ ২০২৬-এর ডিসেম্বরেই শেষ হবে— ফলে কোন শর্তে চুক্তিটির নবায়ন করা হবে, সেটি স্থির করা জরুরি হয়ে পড়েছে।

ওই চুক্তির নবায়নের জন্য মাত্র বছর দেড়েকের মতো সময় হাতে আছে বলেই এ বিশেষজ্ঞ কমিটির বৈঠকটিকে স্থগিত করতে চায়নি কোনো পক্ষই, দুই দেশের কূটনৈতিক মহলের সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা যাচ্ছে।
ঢাকায় ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী বলেছেন, যেহেতু ঢাকায় বর্তমান সরকারের সঙ্গে দিল্লি কোনো দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি বা সমঝোতায় যাবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাই তিস্তা নিয়ে আলোচনা না এগোলেও গঙ্গা নিয়ে বৈঠক কিন্তু ঠিকই হচ্ছে। এটা অবশ্যই ইতিবাচক।

কূটনৈতিক বিশ্লেষক হুমায়ুন কবীর বলেন, ভারত-বাংলাদেশের যৌথ নদী কমিশনের যেকোনো বৈঠকই গুরুত্বপূর্ণ। এটা একটি রুটিন বৈঠক। তবে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে দিল্লিকেও ভূমিকা রাখতে হবে।
বিবিসি বাংলাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ভারত ইস্যুতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বক্তব্য নিয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, প্রধান উপদেষ্টা যে কথা বলেছেন, এটা কিন্তু একেবারে আমাদের অবস্থান। আমি বিভিন্ন সময়ে বলে আসছি ভালো কাজের সম্পর্ক চাই। আর এটা পারস্পরিক শ্রদ্ধার ভিত্তিতে করতে চাই। এই অবস্থানটা প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন। আমাদের প্রথম থেকে একটা স্পষ্ট অবস্থান আছে, এটা তারই প্রতিফলন। বাকিটুকু দেখা যায়, দুই পক্ষের স্বার্থ আছে। সেই স্বার্থ সেই বিবেচনায় সম্পর্ক এগিয়ে যাবে।
গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা যেটি বলেছেন, সেটি আমাদের অবস্থান। আমি নিজেও বিভিন্ন সময়ে বলেছি যে, আমরা একটি ভালো ওয়ার্কিং সম্পর্ক চাই এবং এর ভিত্তি হবে পারস্পরিক শ্রদ্ধা। এই অবস্থানটাই প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন। বাকিটুকু দেখা যাক। দুই পক্ষের স্বার্থ আছে, কে কীভাবে স্বার্থকে দেখে সেটি বিবেচনা করে সম্পর্ক এগোবে।

তিনি আরও বলেন, ভিসা জটিলতা আমরা সৃষ্টি করিনি। ভারত যেকোনো কারণে হোক… ভিসা দেওয়া তাদের সার্বভৌম অধিকার। কোনো দেশ কাউকে যদি ভিসা না দেয় বা কোনো গোষ্ঠীকে ভিসা না দেয়, এটা নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলা যাবে না। এটা তাদের সিদ্ধান্ত। আমরা আশা করছি, তারা (ভারত) তাদের সিদ্ধান্ত জানাবে, আমাদের সাথে কার্যকলাপ বাড়াবে, যেন লোকজন যারা ভারত যেতে চান, তারা ভিসা পান।

আরও পড়ুন

আরও সংবাদ