জেবি টিভি রিপোর্ট : বাসার গ্যারেজ থেকে সংসারের ব্যবহৃত, অপ্রয়োজনীয় পন্য, আসবাবপত্র বিক্রি করা আমেরিকায় খু্বই সাধারণ একটি দৃশ্য । সাধারণ নিম্ন আয়ের অধিবাসীরা এসব দাম বুঝে কেনাকাটা করে থাকেন। ধরেন , এমনই এখন গ্যারেজ সেলে আপনি ক্রেতা হিসাবে গেলেন আর পেয়ে গেলেন বিখ্যাত চিত্র শিল্পী ভ্যান গগের চিত্র কর্ম । কেমন অনুভবন করবেন ?
এমনই এক ঘটনা ঘটেছে এবার এবার মিনেসোটার একটি গ্যারেজ সেলে । সেখান বিক্রি হয়েছে ডাচ শিল্পী ভিনসেন্ট ভ্যান গগের একটি পূর্বে অজানা প্রতিকৃতি ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ১৮৮৯ সালে দক্ষিণ ফ্রান্সে একটি মানসিক হাসপাতাল অবস্থানকালে এটি ভ্যান গগের একেঁছিলেন। আর্ট রিসার্চ প্রতিষ্ঠান এলএমআই গ্রুপ ইন্টারন্যাশনালের বিশেষজ্ঞরা মূলত ক্যানভাসের বুনন, রঙের পিগমেন্ট এবং অন্যান্য বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন।
২০১৬ সালে একটি প্রাচীন বস্তু সংগ্রাহক এই চিত্রকর্মটি ক্রয় করেন, এবং চিত্রের নিচের ডান কোণে “এলিমার” শব্দটি লেখা রয়েছে।
এই চিত্রকর্মটি ৪৫.৭ সেন্টিমিটার বাই ৪১.৯ সেন্টিমিটার (১৮ ইঞ্চি বাই ১৬.৫ ইঞ্চি) মাপের। বিশেষজ্ঞরা চিত্রকর্মটি ভ্যান গঘের বলে চিহ্নিত করেছেন, এবং এটি সনাক্ত করতে চার বছর সময় লেগেছে।
তেলরঙে আঁকা এই চিত্রকর্মটি একটি মৎসজীবীর প্রতিকৃতি, যার সাদা দাড়ি রয়েছে, পাইপ পান করছেন এবং তার জাল মেরামত করছেন।
এলএমআই জানিয়েছে, গবেষকরা অবশ্য ক্যানভাসে একটি চুল পেয়েছিলেন এবং তা বিশ্লেষণ করতে পাঠান। যদিও এটি একটি পুরুষ মানুষের চুল ছিল, ভ্যান গগের বংশধরদের সঙ্গে তার ডিএনএ মেলানোর চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে, কারণ চুলটির অবস্থা অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত ছিল।
এলএমআই গ্রুপের চেয়ারম্যান, প্রেসিডেন্ট এবং সিইও লরেন্স এম. শিনডেল জানান, বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তিকে ঐতিহ্যবাহী শিল্পজ্ঞানের সরঞ্জাম, ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, আনুষ্ঠানিক বিশ্লেষণ এবং প্রমাণপত্র গবেষণার সাথে একত্রিত করে, আমরা আমাদের যত্নে থাকা কাজের অনন্য বৈশিষ্ট্যগুলির ভিত্তিতে আর্ট অটেন্টিকেশন উপলক্ষে সংস্থানগুলিকে প্রসারিত এবং সুনির্দিষ্ট করার লক্ষ্য রাখি । বিশদ বিশ্লেষণ সত্ত্বেও, চিত্রকর্মটি এখনও ভ্যান গঘের কাজ হিসেবে আমস্টারডামের ভ্যান গঘ মিউজিয়াম দ্বারা স্বীকৃত হওয়া বাকি আছে।
মিউজিয়ামটি ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে পূর্ববর্তী মালিকের কাছ থেকে চিত্রকর্মটি ভ্যান গগের কাজ হিসেবে চিহ্নিত করতে অস্বীকার করেছিল।
ডাচ মাস্টার ভ্যান গগ তার জীবদ্দশায় প্রায় ৯০০টি চিত্রকর্ম তৈরি করেছিলেন। তাকে দ্বৈত মেরুদন্ডজনিত সমস্যা এবং সীমান্তজনিত ব্যক্তিত্বগত রোগের সম্মুখীন মনে করা হয়, যদিও এসব রোগ কখনো নির্ণয় করা হয়নি।
এদিকে, ভিনসেন্ট ভ্যান গগ । ছিলেন একজন ওলন্দাজ চিত্রশিল্পী। রুক্ষ সৌন্দর্যের এবং আবেগময় সততার প্রকাশ, সপ্রতিভ রঙের ব্যবহারের কারণে তার কাজ জগৎ জোড়া । যা বিংশ শতাব্দীর শিল্পকলায় সুদূরপ্রসারি প্রভাব রেখেছিল। তিনি ছোট বয়স থেকেই আঁকাআঁকি শুরু করেন। কিন্তু মধ্য বিশের পরে তিনি চিত্রকর্ম আঁকা শুরু করেন অসংখ্য বিখ্যাত চিত্রকর্ম তার জীবনের শেষ দুই বছরে আঁকা।
১৮৫৩ সালের ১৩ মার্চ নেদারল্যান্ডের বেরাইড শহরের কাছে গ্রুট জুন্ডার্থ নামে একটি ছোট গ্রামের একটি উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারে তার জন্ম । জন্মের পর পিতামহের নামে তার নামকরণ হয়। সেই সময়ে পূর্বপুরুষদের নামের নবজাতকের নামকরণের প্রচলন ছিল। তার পুরো নাম ভিনসেন্ট উইলিয়াম ভ্যান গগ।
কুৎসিত মুখাকৃতির ও জীবনের প্রতি প্রবল হতাশায় ভুগছিলেন ভ্যান গগ। জীবনের বড় অংশে জুড়েই ভ্যান গগ মানসিক অসুস্থতায় ভুগেছিলেন। বিভিন্ন মানসিক হাসপাতালে দিন কাটিয়েছিলেন এই স্বনামধন্য চিত্রকার। পরবর্তীতে জানা যায়- দীর্ঘস্থায়ী বিষণ্ণতা, মানসিক ভ্রান্তি জীবনের পুরাটা সময় লেগে ছিল ভিনসেন্টের পেছনে। আধুনিক সাইকিয়াট্রিস্টদের ধারণা তিনি স্কিৎজোফ্রেনিয়া, সিফিলিস, মৃগী রোগ ছাড়াও বাইপোলার ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত ছিলেন। এছাড়াও টাকার অভাবে খাদ্যাভাবের জন্যও বেশ দুর্বল ছিলেন ভ্যান গগ। মূলত মানসিক ও শারীরিক দুভাবেই বেশ অসুস্থ ছিলেন এই চিত্রশিল্পী।
নিজের কান কেটে ফেলেছিলেন তিনি। অনেক ইতিহাসবিদ বলেন, তার বন্ধু পল গাউগুইনের সাথে দ্বন্দ্বে জড়িয়েই রেজর দিয়ে নিজের কান কেটে ফেলেন তিনি। পরবর্তীতে সেটি রাপিং পেপারে মুড়িয়ে যৌনপল্লির এক মহিলার কাছে তা পাঠিয়ে দেন, যে মহিলার নিকট ভ্যান গগ ও পল গাউগুইন দুজনেরই যাতায়াত ছিল। কানে ব্যান্ডেজ করা অবস্থায় অনেক প্রতিকৃত একেছিলেন ভ্যান গগ।