Saturday, February 8, 2025

প্রেসিডেন্ট হিসাবে ট্রাম্পের প্রথম ১০০ ঘণ্টা-ই যেন ১০০ দিন !

Share

জেবি টিভি রিপোর্ট : দ্বিতীয় মেয়াদে এক অভূতপূর্ব গতি নিয়ে কাজ শুরু করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প । প্রথম দিনেই তিনি তার নির্বাচনি প্রতিশ্রুতিগুলো পূরণ করতে শুরু করেছেন, তার অমোঘ ক্ষমতা প্রয়োগ করছেন, এমনকি তার সমালোচকদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধও নিচ্ছেন। জো বাইডেনের কিছুটা শান্ত ও স্থিতিশীল শাসনের পর, ট্রাম্পের এই জাঁকজমকপূর্ণ প্রত্যাবর্তন যেন অনেক মানুষকে নাড়িয়ে দিয়েছে। এই ঘটনার মধ্যে উত্তর পাওয়া যায়, কেন লাখ লাখ মার্কিন নাগরিক ট্রাম্পকে আকর্ষণীয় ও ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে দেখে।

ট্রাম্প তার শাসনের প্রথম দুই দিনে এমন কিছু উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিয়েছেন, যা তার শাসনকালের গতি ও ধরন কেমন হবে, তার একটা স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয়। তিনি ইতিমধ্যে অভিবাসনে কঠোর নিয়ম চালু করেছেন, ৫০০ বিলিয়ন ডলারের একটি প্রযুক্তিগত বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছেন, মেক্সিকো উপসাগরের নাম পরিবর্তন করেছেন এবং ফেডারেল সরকারের বহুত্ববাদ নীতিগুলোর বেশির ভাগই নিষিদ্ধ করেছেন। এছাড়াও তিনি টিকটক অর্ধেক কিনে নেওয়ার জন্য আলোচনা শুরু করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিয়ে কিছু সরকারি কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করেছেন, নতুন ভূখণ্ড সম্প্রসারণের ইঙ্গিত দিয়েছেন, বাণিজ্যযুদ্ধের হুমকি দিয়েছেন এবং সাংবাদিকদের সঙ্গে এত লম্বা আলোচনা করেছেন, যা বাইডেন কয়েক মাসেও করেননি।

এর পাশাপাশি তিনি মার্কিন আইনকে চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালের জানুয়ারি ৬ তারিখের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মুক্তি দিয়েছেন এবং ২০২০ সালের নির্বাচন নিয়ে মিথ্যা দাবি করেছেন। একজন বিশপকে সমালোচনা করেছেন তিনি, হুমকির মুখে ফেলেছেন সরকারের নৈতিকতাকে, নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন ট্রান্সজেন্ডার নিয়ে এবং স্কুল ও গির্জায় ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই)-এর গ্রেফতারি কার্যক্রম চালানোর অনুমতি দিয়েছেন। আর এত সব কাজ তিনি মাত্র দুই দিনে করেছেন।

ট্রাম্প তার কাজের গতি ইচ্ছাকৃতভাবে বাড়িয়েছেন। এই কাজগুলো এত দ্রুত ঘটছে যে, একেকটি ঘটনার গভীরতা বোঝার সময়ই পাওয়া যাচ্ছে না। ট্রাম্পের সমর্থকদের কাছে এই ঘটনাগুলো তার একের পর এক বিজয় এবং প্রতিশ্রুতি পূরণের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে । সাধারণ মানুষ প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টা রাজনীতি নিয়ে ভাবে না। কিন্তু ট্রাম্প যে গল্প ও চিত্র তৈরি করেন, তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, রেডিও ও স্থানীয় সংবাদে ছড়িয়ে পড়ে এবং তার রাজনৈতিক অবস্থান আরো শক্তিশালী করে। অন্যদিকে, তার বিরোধীদের জন্য এটি চরম বিভ্রান্তিকর। তারা বুঝতেই পারে না, কোন বিষয়ে বেশি ক্ষুব্ধ হওয়া উচিত। বিরোধী দল একক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করতে ব্যর্থ হয় এবং ট্রাম্প সহজেই দায়মুক্তি পেয়ে যান।

নতুন প্রশাসন ক্ষমতায় আসার পর প্রথম দিকে এমনিতেই অনেক কাজের চাপ থাকে। এর জন্য তাদের শাসনের প্রথম ১০০ দিনে কী কী অর্জিত হয়েছে, তার প্রতি জোর দেওয়া হয়, তবে এখানে ট্রাম্প তার শাসনের প্রথম ১০০ ঘণ্টার ওপর জোর দিয়েছেন বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। ট্রাম্প এখন পর্যন্ত শুধু সহজ কাজগুলো করেছেন, তার প্রাথমিক পরিকল্পনা সফলভাবে সম্পন্ন করেছেন। এর পর তার জন্য দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সংকট অপেক্ষা করছে, যে বিষয়গুলোতে প্রথম মেয়াদে ট্রাম্প প্রশাসন বেশ দুর্বল ছিল। শত শত নির্বাহী আদেশ স্বাক্ষর করা এক বিষয়, যার মধ্যে কিছু জিনিস ইতিমধ্যেই আদালতের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে, আর সেগুলো বাস্তবায়িত করা হবে আরো বেশি কঠিন কাজ।

তবে একথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, প্রথম মেয়াদের তুলনায়, এবার ট্রাম্প প্রশাসন অনেক বেশি সংগঠিত। তার শাসনের শুরুর অগোছালো অবস্থা এবার আর নেই। নতুন হোয়াইট হাউজ চিফ অব স্টাফ সুজ্যান উইলিসকে এর জন্য কৃতিত্ব দেওয়া হচ্ছে। তিনি ট্রাম্পের প্রচার অভিযান সংগঠিত করতে সাহায্য করেছিলেন এবং এখন হোয়াইট হাউজেও সেই দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছেন। এবার ট্রাম্প জানেন, তিনি কী করতে চান এবং কীভাবে তা করবেন। দ্বিতীয় শপথ গ্রহণের পর তার যে ইতিবাচক মনোভাব দেখা গেছে, তা তাকে আরো আত্মবিশ্বাসী করেছে।

ট্রাম্প গত সোমবার তার সমর্থকদের উদ্দেশে একটি ভাষণে ২০২০ সালের নির্বাচনের বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন। ‘সবাই বলেছিল যে, মূল্যস্ফীতি আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা। আমি বলেছিলাম, আমি এই বিষয়ে একমত নই। আমি মনে করি বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ক্রিমিনাল ও মানসিক ভারসাম্যহীন লোকজন আমাদের দেশে আসছে, এটাই আমার কাছে সবচেয়ে বড় সমস্যা।’ ট্রাম্প তার বক্তব্য অনুযায়ী নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে সীমান্তে কঠোর ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছেন। এমনকি তিনি স্কুল ও ধর্মীয় উপাসনালয়গুলোতেও অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন।

ট্রাম্পের বিরোধীদের অন্যতম ভয় ছিল, তিনি যদি আবার ক্ষমতায় আসেন, বিশেষত নিজেকে নিপীড়নের শিকার হিসেবে দাবি করার পর, তিনি আইনকে নিজের ইচ্ছামতো ব্যবহার করবেন। তাদের এই ভয় ইতিমধ্যেই বাস্তবে রূপ নিচ্ছে, কারণ ট্রাম্প তার ক্ষমার ক্ষমতাকে একটু বেশিই ব্যবহার করছেন।

তিনি জানুয়ারি ৬, ২০২১ সালের ঘটনায় দণ্ডপ্রাপ্ত ১ হাজারেরও বেশি লোককে ক্ষমা করেছেন এবং পুলিশ কর্মকর্তাদের ওপর আক্রমণ করার জন্য দোষী সাব্যস্ত হওয়া ব্যক্তিদেরও ক্ষমা ঘোষণা করেছেন। বিপরীতে ট্রাম্প বাইডেনের পরিবারের সদস্যদের পূর্বনির্ধারিত ক্ষমার জন্য বাইডেনকে দোষারোপ করেছেন, যারা নতুন বিচার বিভাগের লক্ষ্যবস্তু হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছিল। ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে অনেকেই আশঙ্কা করছেন যে, বাইডেনের এই অভূতপূর্ব পদক্ষেপ ট্রাম্পকে তার ক্ষমতা আরো বাড়ানোর অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করতে উৎসাহিত করবে। তবে ট্রাম্প অন্তত সাংবাদিকদের সামনে তার সিদ্ধান্তের কারণ ব্যাখ্যা করেছেন—যেটা বাইডেন করেননি।

গত মঙ্গলবার রাতে, ট্রাম্প ডার্ক ওয়েবের সিল্ক রোড ই-কমার্স সাইটের প্রতিষ্ঠাতা রস উইলিয়ামকেও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছেন। যদিও মার্কিন বিচার বিভাগ এই সাইটকে ‘ইন্টারনেটের সবচেয়ে অ্যাডভান্সড ও অনলাইন অপরাধের আঁতুড়ঘর’ বলে ঘোষণা দিয়েছিল। ট্রাম্পের ক্ষমা করার ক্ষমতার এমন ব্যবহারে নতুন উদ্বেগ সৃষ্টি হবে যে, তিনি এখন কার্যত আইনের ঊর্ধ্বে কাজ করছেন এবং যারা তাকে রাজনৈতিকভাবে সাহায্য করবেন, তারা এই আইনি সুবিধা পেতে থাকবেন।

ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তনের পর থেকে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলোর একটি হলো, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে বারবার প্রকাশ্যে বার্তা পাঠানো, যাতে ইউক্রেনের যুদ্ধ শেষ করার জন্য একটি চুক্তিতে আসার জন্য তাকে রাজি করানো যায়।

সোমবার ট্রাম্প উল্লেখ করেছিলেন, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি আলোচনার জন্য প্রস্তুত। মঙ্গলবার তাকে জিগ্যেস করা হয়েছিল যে তিনি পুতিনের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা চাপাবেন কি না, যদি তিনি চুক্তিতে না আসেন। ট্রাম্প উত্তরে বলেন, ‘হয়তো’।

ট্রাম্প এখন পর্যন্ত চীনের বিরুদ্ধে প্রতিশ্রুত শুল্ক স্থগিত রেখেছেন এবং সোমবার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে বেইজিং সফরের আগে তিনি এই হুমকিকে আলোচনার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন। তিনি মঙ্গলবার আরেকটি বাণিজ্য যুদ্ধের সম্ভাবনা উল্লেখ করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতি নতুন হুমকিও দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘তারা আমাদের সঙ্গে খুবই বাজে আচরণ করে। তাই তাদের জন্য অপেক্ষা করছে শুল্ক।’

প্রথম দিনের অফিস শেষে চাইনিজ প্রতিষ্ঠান টিকটক আংশিকভাবে ক্রয় করার ব্যাপারে আলোচনার সময় সাংবাদিকরা তাকে প্রশ্ন করেন, আপনি কি চান, ইলন মাস্ক এই কোম্পানিটি কিনে নিক? জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘ইলন যদি কিনতে চায় তাহলে অবশ্যই আমি তাকে সমর্থন করব।’

 

আরও পড়ুন

আরও সংবাদ