Saturday, February 8, 2025

শেখ পরিবারের দুর্নীতি এখন বিশ্ব দরবারে

Share

জেবি টিভি রিপোর্ট : খালা শেখ হাসিনার আর্থিক দুর্নীতির সাথে সংযোগের অভিযোগ ওঠার পর যুক্তরাজ্য সরকারের ট্রেজারি মন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন টিউলিপ সিদ্দিক। সিটি ও দুর্নীতিবিরোধী মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করা টিউলিপ সিদ্দিক তাঁর খালা শেখ হাসিনার সঙ্গে সম্পর্কিত ব্যক্তির দেওয়া বাড়িতে বসবাস করেছেন।
কয়েক দিন ধরে গুঞ্জন চলছিল, টিউলিপ সরকার থেকে পদত্যাগ করবেন। অবশেষে তিনি সরে যেতে বাধ্য হলেন।

এবার আন্তর্জাতিকভাবে ধরা খেলেন শেখ হাসিনা ও তার দোসররা। শেখ পরিবারের দুর্নীতি এখন আন্তর্জাতিক মহলে চলে গেছে। ঘটনাটি ব্রিটেনের হলেও, বিশ্ববাসীর নজর ছিলো সেই দিকে।

কেননা সমালোচনার মুখে শেষ পর্যন্ত পদত্যাগ করলেন ব্রিটেনের আর্থিক সেবা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক।

মঙ্গলবার যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন দুর্নীতির অভিযোগে কয়েক সপ্তাহ ধরে সমালোচনার মধ্যে থাকা টিউলিপ।

স্বৈরাচার ও গণহত্যার নির্দেশদাতা শেখ হাসিনার ভাগ্নি ব্রিটিশ এই এমপি লন্ডনে ফ্ল্যাট নিয়ে এবং বাংলাদেশে দুর্নীতি ও অনিয়ম নিয়ে আলোচনার মধ্যে ছিলেন।

সবশেষ যুক্তরাজ্যের দুর্নীতি বিরোধী জোট দুর্নীতিবিরোধী দায়িত্ব থেকে তাকে সরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানানোর মধ্যে স্টারমারের মন্ত্রিসভা থেকে তার পদত্যাগের খবর এলো।

পদত্যাগপত্রে টিউলিপ দাবি করেছেন, অভিযোগ পর্যালোচনার পর ব্রিটিশ সরকারের ইনডিপেনডেন্ট এথিকস অ্যাডভাইজর স্যার লাউরি ম্যাগনাস নিশ্চিত করেছেন, টিউলিপ মন্ত্রী হিসেবে কোনো নিয়ম লঙ্ঘন করেননি।

পরে মন্ত্রিত্ব থেকে সরে দাঁড়ানো টিউলিপ তার পদত্যাগের কথা জানান। এতে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো পদত্যাগপত্রের ছবিও পোস্ট করেন।

পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে টিউলিপকে লেখা স্টারমারের লেখা চিঠিতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, স্বাধীন উপদেষ্টা হিসেবে স্যার লরি ম্যাগনাস তাকে আশ্বস্ত করে বলেছেন, তিনি মন্ত্রী হিসেবে তার বিরুদ্ধে নিয়ম লঙ্ঘন ও আর্থিক অনিয়মের কোনো অভিযোগের ঘটনা পাননি।

লন্ডনে বিনামূল্যে ফ্ল্যাট উপহার নেওয়া এবং বাংলাদেশে একটি প্রকল্পে বড় অঙ্কের দুর্নীতিতে তার নাম আসার পাশাপাশি রাজধানীতে প্লট নিতে অনিয়মের অভিযোগও ওঠে টিউলিপের বিরুদ্ধে। এসব খবর আসার পর ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমে তাকে পদত্যাগের আহ্ববানের পাশাপাশি কিংবা প্রধানমন্ত্রীকে তাকে বাদ দেওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয়।

বাংলাদেশে শেখ হাসিনার মত টিউলিপের বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগে তদন্ত শুরু হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ঘুষ আর অনিয়মের মাধ্যমে পাওয়া বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার তারা অবৈধভাবে অন্য দেশে পাচার করেছেন।

পরিস্থিতি আরো জটিল করে তুলেছে লন্ডনের কয়েকটি বাড়ি, যেগুলো টিউলিপ এবং তার পরিবারের সদস্যদের উপহার দেওয়া হয়েছে কিংবা বিনা পয়সায় থাকতে দেওয়া হয়েছে। আর সেগুলো তাদের দিয়েছেন ধনাঢ্য বাংলাদেশিরা, যাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ এবং শেখ হাসিনার যোগ আছে।

এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় রয়েছে কিংস ক্রসের একটি ফ্ল্যাট, যেটা ২০১৪ সালে টিউলিপকে উপহার দিয়েছিলেন আবদুল মোতালিফ নামের এক ব্যবসায়ী। মোতালিফ হাসিনার ঘনিষ্ঠ। এখন ওই ফ্ল্যাটের দাম ৭ লাখ পাউন্ড। ওই ফ্ল্যাট ভাড়া দিয়ে টিউলিপ থাকেন অন্য বাসায়।

ব্রিটেনের সিটি মিনিস্টার হিসেবে আর্থিক খাতের দুর্নীতি বন্ধ করা টিউলিপের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। সেখানে টিউলিপের বিরুদ্ধেই দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় তাকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার দাবি উঠতে শুরু করে।

তবে প্রথম থেকেই এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন ৪২ বছর বয়সী টিউলিপ। টিউলিপ তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ মোকাবেলায় চ্যান্সেলর র‌্যাচেল রিভসের চীন সফর থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন। তার সরে দাঁড়ানোর দাবি জোরালো হওয়ার মধ্যে গত সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী আবারও তার পক্ষ নিয়ে বলেন, টিউলিপের বিষয়ে তার পূর্ণ আস্থা রয়েছে।

তবে কনজারভেটিভরা টিউলিপকে বরখাস্ত করার আহ্বান জানিয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশের সরকারপ্রধান মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, তদন্তে যদি প্রমাণ হয় যে টিউলিপ এসব ‘ডাকাতি’র সুবিধাভোগী, তাহলে সম্পত্তিগুলো ফিরিয়ে দেওয়া উচিত।

টিউলিপকে ক্ষমা চাইতে ও পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি সানডে টাইমসকে বলেছেন, তিনি দুর্নীতি দমনবিষয়ক মন্ত্রী হয়েছেন এবং নিজেকে এখন নির্দোষ দাবি করছেন।

এ নিয়ে তর্ক-বির্তক আর সমালোচনার মধ্যেই মঙ্গলবার টিউলিপের মন্ত্রিত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা এলো।

এ নিয়ে গত দুই মাসে দুজন মন্ত্রী হারালেন স্টারমার। তিনি গত জুলাইয়ে সাধারণ নির্বাচনের মধ্যদিয়ে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই গ্রহণযোগ্যতা হারাতে শুরু করেন।

আরও পড়ুন

আরও সংবাদ