জেবি টিভি রিপোর্ট : এ বছরই ৪শ বছরে পা দিতে যাচ্ছে পৃথিবীর অন্যতম ব্যস্ত শহর নিউইয়র্ক । বৈচিত্র্যময় যে শহর কখনোই ঘুমায় না । এই ৪শ বছর পদার্পণ উপলক্ষ্যে বিশেষ কর্মসূচী হাতে নিয়েছে সিটি প্রশাসন।
এরই মধ্যে ৪০০ বছরের ঐতিহ্য উদযাপন করতে “Founded By NYC” নামে একটি বিশেষ ক্যাম্পেইনের সূচনা করেছে মেয়র এরিক অ্যাডামস। গত ৬ ৬ জানুয়ারি কমিউনিটি অপ:এড-এ সিটি মেয়র এরিক অ্যাডামস্ জানান, ‘ এই অভূতপূর্ব বছরটি উদযাপনের ক্যাম্পেইন ঘোষণা করতে পেরে সত্যিই আনন্দিত তিনি । নিউইয়র্ক প্রতিষ্ঠার বহু আগে থেকে এখানে বসবাসরত আদিবাসী সম্প্রদায়ের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের উপর কেন্দ্রিত উদযাপনটি নিউইয়র্ক সিটির সেই অসামান্য অবদানগুলোকে তুলে ধরে, যা আমাদের জাতিকে রূপ দিয়েছে এবং বিশ্ব মঞ্চে আমাদের দেশের অবস্থানকে সুসংহত করেছে।’
উল্লেখ্য , ১৬২৫ সালে ম্যানহাটনে প্রথম ইউরোপীয় বসতি স্থাপন হয়। এবার চার শতাব্দী পূর্ণ হচ্ছে এ বছর। সে সময় এই এলাকা ‘লেনাপেহোকিং’ নামে পরিচিত ছিল, যা লেনাপে জনগণের আবাসভূমি ছিল। ছোট্ট ডাচ কলোনি তখন নিউ আমস্টারডাম নামে পরিচিত ছিল এবং পরে ইংরেজদের নিয়ন্ত্রণে এসে নিউইয়র্ক নাম ধারণ করে। এক শতাব্দী আগে এর সীমানা ম্যানহাটন বাইরে বিস্তৃত হয়ে ব্রঙ্কস, ব্রুকলিন, কুইন্স এবং স্ট্যাটেন আইল্যান্ডকে অন্তর্ভুক্ত করে।
অ্যাডামস্ আরো জানান, তাদের FoundedByNYC.com-ওয়েবসাইটটিতে এ নিয়ে নানা ইভেন্ট এবং কার্যক্রম রয়েছে, যা শহরের অসাধারণ ৪০০ বছরের ইতিহাসকে তুলে ধরবে। এখানে সাইন আপ করে যে কেউ প্রশাসনের নিউজলেটার পেতে পারেন, যা ব্যক্তিকে পাঁচটি বোরোর ইভেন্ট সম্পর্কে আপডেট দিবে। এছাড়াও, কেউ চাইলে নিউইয়র্ক সিটির অতীতকে প্রদর্শন করে এমন সব নিজস্ব ইভেন্টের তথ্য জমা দিতে পারবেন যা তারা ক্যালেন্ডারে তুলে ধরবে।
অ্যাডামস্ আরোও বলেন, ‘আমাদের শহরের অসাধারণ সব অর্জন উদযাপন করার পাশাপাশি, আমাদের প্রশাসন শহরের জটিল বহুমুখী অতীতকে স্বীকার করার এবং এর সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার বিষয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ। এই কারণেই আমরা ডেলাওয়্যার ট্রাইব অফ ইন্ডিয়ান্সের চিফ, ব্র্যাড কিলস্ক্রো-এর সঙ্গে গ্রেসি ম্যানশনে সাক্ষাৎ করেছি এবং ২০ নভেম্বর দিনটিকে ‘লেনাপে হেরিটেজ ডে’ হিসেবে ঘোষণা করেছি। লেনাপে জনগণ এই অঞ্চলের মূল অধিবাসী। আমরা তাদের অভিজ্ঞতাজাত কষ্ট এবং এই শহরের জন্য অতিতে তাদের অসাধারণ অবদান, যা এখনও করছেন, তা গভীরভাবে স্বীকার করি।’
অ্যাডামস্ বলেন, ‘লেনাপে জনগণের মতোই, আমাদের শহরের গল্প শেষ পর্যন্ত ধৈর্য এবং বিজয়ের গল্প। বহু জাতি, ধর্ম এবং জাতিসত্তার মানুষ, যারা এর শুরুর দিনগুলো থেকেই এই শহরের অন্যতম বৈশিষ্ট্য, একত্রে কাজ করে এমন একটি সম্পূর্ণতা তৈরি করেছে যা এর প্রতিটি অংশের যোগফলের চেয়েও বেশি। চার শতাব্দী ধরে, নিউইয়র্ক সিটি সারা বিশ্বের মানুষের জন্য আশার বাতিঘর হয়ে দাঁড়িয়েছে—এই শহর এমন একটি স্থান যেখানে ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহনশীলতা বিরাজ করে এবং যেখানে আমেরিকান স্বপ্ন পূরণ করা সম্ভব। আমাদের প্রশাসন সেই স্বপ্নকে নিউইয়র্কবাসীর জন্য আরও কাছাকাছি নিয়ে আসতে কঠোর পরিশ্রম করে চলেছে। আমরা ঐতিহাসিক ‘সিটি অফ ইয়েস ফর হাউজিং অপর্চুনিটি’ পরিকল্পনা পাশ করেছি, যা একটি নতুন প্রজন্মের সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসন তৈরিতে সহায়ক। আমরা ‘অ্যাক্স দ্য ট্যাক্স ফর দ্য ওয়ার্কিং ক্লাস’ প্রস্তাব করেছি, যা কঠোর পরিশ্রমী নিউইয়র্কবাসীদের জন্য শহরের আয়ের কর কমানোর এবং কিছু ক্ষেত্রে তা বাতিল করার উদ্যোগ। গত বছর আমরা অবৈধ অস্ত্র জব্দ করে, গস্ট কার এবং অন্যান্য অবৈধ যানবাহন রাস্তা থেকে সরিয়ে এবং লাইসেন্সবিহীন গাঁজার দোকান বন্ধ করে অপরাধ কমিয়েছি। আমরা রেকর্ডসংখ্যক নতুন চাকরি এবং ছোট ব্যবসা তৈরি করেছি, সাশ্রয়ী আবাসনের ক্ষেত্রে নতুন রেকর্ড স্থাপন করেছি এবং পাঁচটি বোরো জুড়ে পথচারীদের জন্য রেকর্ড পরিমাণ জনসাধারণের স্থান তৈরি করেছি।’
৪০০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপনের পাশাপাশি, অ্যাডামস্ প্রশাসন পরবর্তী ৪০০ বছরের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানান—যেখানে শহরজুড়ে কম্পোস্টিং প্রবর্তন, নতুন পার্ক তৈরি, গাছ লাগানো এবং ইস্ট সাইড কোস্টাল রেজিলিয়েন্সি প্রজেক্ট-এর প্রথম ধাপ সম্পন্ন করার মাধ্যমে জলবায়ু সহনশীলতাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন তারা।
সবশেষে অ্যাডামস্ বলেন, ‘বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ শহরের মেয়র হিসেবে আমি নিউইয়র্কের মহৎ প্রতিশ্রুতি পূরণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং প্রতিদিন, সর্বত্র আপনার জন্য কাজ করে যাচ্ছি।’
