জেবি টিভি রিপোর্ট : ভারতে প্রায় ভাঙার মুখে এসে দাঁড়িয়েছে বিরোধীদের ‘ইন্ডিয়া’ জোট। কংগ্রেসের নেতৃত্ব নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস, সমাজবাদী পার্টি ও আম আদমি পার্টি (আপ) আগেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। নেতৃত্ব বদলের দাবি জানিয়েছে। এবার আম আদমি পার্টি জানাল, কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব দিল্লির নেতাদের সংযত না করলে তারা ‘ইন্ডিয়া’ নেতৃত্বকে বলবে কংগ্রেসকে জোট থেকে ছেঁটে ফেলতে। স্পষ্টতই, কংগ্রেসকে নিয়ে ক্ষোভের মুখে ‘ইন্ডিয়া’ জোটের ফাটল গভীরতর হয়েছে।
লোকসভা ভোটে দিল্লির সাতটি ও চণ্ডীগড়ের একমাত্র আসনে কংগ্রেস ও আম আদমি পার্টি একজোট হয়ে লড়াই করেছিল। কিন্তু পাঞ্জাবে দুই দলের সমঝোতা হয়নি। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে দিল্লি বিধানসভার ভোটে দুই দল আলাদাভাবে লড়বে ঠিক করেছে। এ অবস্থায় গতকাল বুধবার দিল্লি কংগ্রেসের নেতা ও সর্বভারতীয় কোষাধ্যক্ষ অজয় মাকেন এবং প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি দেবেন্দ্র যাদব সংবাদ সম্মেলন করে দিল্লি সরকারের ‘দুর্নীতি ও অপশাসন’ নিয়ে একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করেন। ওই সময় তাঁরা আপ নেতা ও দিল্লির সাবেক মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে ‘ফর্জিওয়াল’ (জালিয়াত) বলে অভিহিত করেন।
মাকেন ও যাদব বলেন, কেজরিওয়াল কখনো নীতিসর্বস্ব রাজনীতি করেননি। তিনি সব সময় রাজনৈতিক স্বার্থে কাজ করেছেন। ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ, সিএএ বা নাগরিকত্ব আইনের সংশোধন এবং অভিন্ন দেওয়ানি বিধিকে সমর্থন করেছেন।
কংগ্রেস নেতারা বলেন, লোকপাল আন্দোলনে আন্না হাজারেকে সঙ্গ দিয়ে কেজরিওয়াল রাজনৈতিক নেতা হিসেবে মাথা তুলেছেন। অথচ দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর আজও তিনি দিল্লিতে জন লোকপাল গঠন করেননি। দিল্লিতে নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে তিনি উপরাজ্যপালকে খাড়া করেছেন অথচ পাঞ্জাবেও তিনি জন লোকপাল গঠন করেননি।
প্রদেশ কংগ্রেস নেতাদের প্রকাশ্য অভিযোগ ও কেজরিওয়ালকে ‘ফর্জিওয়াল’ বলার পরের দিনই আজ বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে কংগ্রেসকে একহাত নেন মুখ্যমন্ত্রী আতিশি ও সংসদ সদস্য সঞ্জয় সিং। তাঁরা বলেন, দিল্লিতে বিজেপিকে জেতাতে কংগ্রেস মরিয়া। অজয় মাকেন বুধবার যা বলেছেন, তা বিজেপিরই তৈরি করে দেওয়া স্ক্রিপ্ট। বিজেপির হয়ে তাঁরা আপ নেতাদের আক্রমণ করছেন।
আপ নেতারা বলেন, গতকাল কংগ্রেস নেতারা সব সীমা অতিক্রম করে কেজরিওয়ালকে জালিয়াত ও দেশবিরোধী বলেছেন। অথচ আজ পর্যন্ত তাঁরা বিজেপির কোনো নেতাকে দেশবিরোধী বলেননি।
সঞ্জয় সিং বলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মাকেনের বিরুদ্ধে কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব ব্যবস্থা না নিলে ‘ইন্ডিয়া’ জোট থেকে কংগ্রেসকে বের করে দেওয়ার দাবি জানাবেন তাঁরা।
দিল্লি নির্বাচনে আপ ও কংগ্রেস আলাদা লড়াইয়ের সিদ্ধান্ত আগেই নিয়েছে। দুই দলই ৭০ আসনের অনেকগুলোতে নিজেদের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে। কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে কংগ্রেস প্রার্থী করছে সাবেক মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিতের ছেলে সন্দীপকে।
মহারাষ্ট্র ও হরিয়ানায় কংগ্রেসের খারাপ ফলের পর থেকেই ‘ইন্ডিয়া’ জোটের নেতৃত্বের রাশ নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে প্রধানত তৃণমূল কংগ্রেস। তাদের সমর্থনে পাশে দাঁড়িয়েছে সমাজবাদী পার্টি ও আপ নেতৃত্ব। সংসদে আদানি–কাণ্ড নিয়ে প্রতিবাদে ক্রমে তারা নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছে। সংবিধান ও আম্বেদকর বিতর্কে প্রতিবাদী হলেও তারা কংগ্রেসের বিক্ষোভে সব সময় শামিল হয়নি। এ অবস্থায় দিল্লির ভোটকে কেন্দ্র করে কংগ্রেস-আপ সম্মুখ সমরে দাঁড়িয়েছে। ফলে ভাঙনের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে ‘ইন্ডিয়া’ জোট।