কাজী জহিরুল ইসলাম : আসুন আমরা সময়টাকে একটু ফাস্ট ফরোয়ার্ড করি। ২০২৬ সালের দ্বিতীয় ভাগ। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। ৬টি সংস্কার কমিশন তাদের প্রস্তাব জমা দিয়েছে। সেগুলো নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার পর একটি মতৈক্য তৈরি হয়েছে। সে-অনুযায়ী সংস্কার কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে।
দেশের বিভিন্ন শহরের রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশ ছোটো শিশুদের কোলে নিয়ে, বয়োবৃদ্ধ, শারীরিক ভাবে অক্ষম মানুষকে হাত ধরে, রাস্তা পার করে দিচ্ছে, স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা রাস্তাঘাটে বিপদগ্রস্ত হবার সম্ভাবনা টের পেলে নিরাপত্তার জন্য দৌড়ে পুলিশের কাছে ছুটে যাচ্ছে, মানুষ থানায় জিডি করতে গেলে হাসিমুখে জিডি লিখে নিচ্ছে পুলিশ, দেশের সর্বত্রই পুলিশ হয়ে উঠেছে জনগণের বন্ধু।
বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন, তাদের জন্য পৃথক সচিবালয় গঠন করা হয়েছে। দেশের সকল পর্যায়ের আদালতে বিচারক নিয়োগসহ বিচার বিভাগের সকল প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালিত হয় বিচার বিভাগের নিজস্ব সচিবালয়ের মাধ্যমে। বিচার বিভাগের ওপর নির্বাহী বিভাগের তথা আইন মন্ত্রণালয়ের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। দেশের ভেতরে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা, বহির্বিশ্বের সঙ্গে আইনি লড়াই করা এবং রাষ্ট্রের পক্ষে এটর্নি জেনারেলের মাধ্যমে আদালতে লড়াই করাই আইন মন্ত্রণালয়ের কাজ। সিভিল প্রশাসনে ঘুষ দুর্নীতি প্রায় শূন্যের ঘরে নেমে এসেছে, নিয়োগ এবং পদোন্নতি প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা এসেছে।
দুর্নীতি দমন কমিশন সরকারের নিয়ন্ত্রণমুক্ত হয়েছে। স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশন সততার সঙ্গে দেশকে দুর্নীতি মুক্ত করার অঙ্গীকার নিয়ে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। দেশের প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর অনেক রাঘব বোয়াল দুদকের অনুসন্ধানের জালে ধরা পড়ে কুপোকাত।
সংস্কারের মধ্য দিয়ে প্রায় একটি নতুন সংবিধান প্রণীত হয়েছে যা গণভোটের মাধ্যমে দেশের মানুষের অনুমোদন পেয়েছে। দুই মেয়াদের বেশি [বিরতি দিয়ে বা না দিয়ে] কেউ প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন না। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দলের প্রধানের [যদি থেকে থাকে] পদ থেকে ইস্তফা হয়ে যাবে, অর্থাৎ কেউ একই সঙ্গে সরকার প্রধান এবং কোনো রাজনৈতিক দলের প্রধান থাকতে পারবেন না। বিশেষ কিছু ক্ষেত্র ছাড়া ফ্লোর ক্রসিং করা যাবে। হাইব্রিড সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। এই ব্যবস্থায় ৬৪ জেলা থেকে একজন পুরুষ ও একজন নারী প্রতিনিধি সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হবেন। বাকি ২২২ জন দলীয় ব্যালটে সংখ্যানুপাতে নির্বাচিত হবেন। সংসদে একটি উচ্চকক্ষ রাখার বিধান করা হয়েছে। সংসদের মেয়াদ ৫ বছর থেকে কমিয়ে ৪ বছর করা হয়েছে। উচ্চকক্ষ বা আইনসভার নির্বাচন হবে মধ্যবর্তী নির্বাচন, অর্থাৎ নির্বাচিত সরকারের দুই বছর অতিক্রমের পর আইন সভার নির্বাচন হবে। উপরাষ্ট্রপতি পদমর্যাদায় রাষ্ট্রের একজন ন্যায়পাল নিয়োগের বিধান রাখা হয়েছে। নির্বাচনকালীন সময়ে তিন মাসের জন্য অরাজনৈতিক তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুন:প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এই সময়ে তত্বাবধায়ক সরকার রুটিন রাষ্ট্রীয় কাজকর্ম পরিচালনা করবে। নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে নির্বাচন পরিচালনা করবে, নির্বাচনে ব্যবহৃত জনবল [পুলিশ, সিভিল প্রশাসন এমন কী যদি প্রয়োজন হয় প্রতিরক্ষা বাহিনীও] এই সময়টাতে নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকবে।
সংস্কারের মধ্য দিয়ে নির্বাচন কমিশনকে সম্পূর্ণ স্বাধীন ও শক্তিশালী করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোই শুধু নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে। নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোকে কমিশন কর্তৃক প্রদত্ত কাঠামো অনুসরণ করে গঠনতন্ত্র সংস্কার করতে হবে। নির্ধারিত মেয়াদ পরপর বাধ্যতামূলকভাবে দলের জাতীয় কমিটি পুনর্গঠন করতে হবে। কোনো ব্যক্তি দুই মেয়াদের বেশি দলের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক বা সমমর্যাদার পদে থাকতে পারবেন না।
আসুন এবার আমরা সময়টাকে আরো একটু ফাস্ট ফরোয়ার্ড করি। জাতীয় নির্বাচন হয়ে গেছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল নির্বাচনে জয়লাভ করেছে। এবার এক নতুন চমক দেশের মানুষের জন্য অপেক্ষা করছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমান ঘোষণা করলেন তিনি দলের প্রধানের দায়িত্বে থেকে দলের দেখাশুনা করবেন, প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেবেন না। বরং তিনি দলের মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে অনুরোধ করলেন সংসদ নেতা হতে এবং তার নেতৃত্বে নতুন সরকার গঠন করতে। এই ঘোষণায় দেশের মানুষ যারপরনাই আনন্দিত, তারা তারেক রহমানের মধ্যে মহাত্মা গান্ধীকে দেখতে পাচ্ছেন। দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম তারেক রহমানের প্রশংসায় ভাসছে। সব গণমাধ্যম বলছে তারেক রহমান হয়ে উঠেছেন উপমহাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নেতা। তিনি একালের নির্লোভ রাজনীতির এক নতুন দৃষ্টান্ত। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি নতুন ধারার প্রবর্তন হলো, যার মূলমন্ত্র ‘’ক্ষমতা নয়, গণমানুষের সেবা করাই রাজনীতি-ধর্ম”।
হলিসউড, নিউইয়র্ক। ৫ ডিসেম্বর ২০২৪