জেবি টিভি রিপোর্ট : যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত অভিবাসীদের কর সংক্রান্ত নথিপত্র মার্কিন আইন সংস্থাগুলোর কাছে হস্তান্তরের সিদ্ধান্তে এবার পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অভ্যন্তরিন রাজস্ব সংস্থার (আইআরএস) এর ভারপ্রাপ্ত কমিশনার মেলানি ক্রাউজ।
বুধবার এমনটা জানিয়েছে মার্কিন ট্রেজারি বিভাগের একাধিক সূত্র । যেখানে জানানো হয়েছে, অভিবাসীদের কর সংক্রান্ত তথ্য উপাত্ত
ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই)-এর হাতে তুলে দেয়ার সিদ্ধান্তে রাজি হওয়ায় পদত্যাগের চিন্তা করছেন এই ঝানু কর্মকর্তা। অবৈধ অভিবাসীদের শনাক্ত ও বহিষ্কারের কাজে সহায়তার জন্য এসব কর সংক্রান্ত নথিপত্র যাচাই করবে আইআরএস ।
ট্রেজারি বিভাগের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ট্রেজারির এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে মতানৈক্যের কারণেই মেলানি ক্রাউজ সংস্থা ছাড়ছেন।
ট্রেজারির একজন মুখপাত্র বলেন, মেলানি ক্রাউজ আইআরএসকে অসাধারণ পরিবর্তনের সময় নেতৃত্ব দিয়েছেন। আমরা যখন তথ্যপ্রযুক্তি আধুনিকায়ন ও করদাতাদের আরও ভালো সেবা দিতে সংস্থার পুনর্গঠন করছি, তখনই অনেকদিনের বাধা হয়ে থাকা ডেটা সাইলোগুলো ভেঙে ফেলছি—যেগুলো অপচয়, জালিয়াতি, ও অপরাধীদের শনাক্ত করার পথে বাধা ছিল।
সূত্র জানায়, ক্রাউজ সংস্থার সদ্য প্রস্তাবিত Deferred Resignation Program-এ যোগ দিয়ে পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন। তিনি ২৮ এপ্রিলের আগেই আইআরএস ছাড়তে পারেন।
আরও জানা গেছে, আইআরএসের চিফ প্রাইভেসি অফিসার ক্যাথলিন ওয়াল্টারস, চিফ ফিনান্সিয়াল অফিসার টেরেসা হান্টার, ও চিফ রিস্ক অফিসার মাইক ওয়েটকলোও সংস্থাটি ছাড়ছেন। এর মধ্যে ওয়াল্টারসও Deferred Resignation Program-এর আওতায় সংস্থা ছাড়ছেন এবং তার পদত্যাগও ট্রেজারি-ডিপার্টমেন্ট অফ হোমল্যান্ড সিকিউরিটির মধ্যে হওয়া ডেটা শেয়ারিং চুক্তির সঙ্গে যুক্ত, বলে এক সূত্র জানিয়েছে।
এদিতে গত সোমবার রাতে, পাবলিক সিটিজেন নামক একটি সংস্থা কর্তৃক দায়ের করা মামলার একটি আদালতের নথিতে আইআরএস ডিপার্টমেন্ট অফ হোমল্যান্ড সিকিউরিটির সঙ্গে সম্পাদিত একটি সমঝোতা স্মারক প্রকাশ করে। মামলাটি ট্রেজারি বিভাগকে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের কাছে করদাতার তথ্য প্রকাশ করতে বাধা দিতে চায়।
দাখিল করা নথি অনুসারে, আইআরএস সব অনুরোধ পর্যালোচনা করবে এবং কী কী তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে, তার হিসাব রাখবে। যদিও চুক্তির অনেক অংশ রেডাক্ট করা, তবুও জানা গেছে আইআরএস আইসিকে অভিবাসীদের নাম, ঠিকানা সহ বিভিন্ন তথ্য সরবরাহ করবে।
এই নতুন ডেটা-শেয়ারিং চুক্তির ফলে আইসিই অভিবাসীদের নাম ও ঠিকানা তাদের ট্যাক্স রেকর্ডের সঙ্গে মিলিয়ে দেখতে পারবে।
ট্রেজারি দাবি করছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের যুক্তরাষ্ট্র সীমান্ত সুরক্ষার এজেন্ডা বাস্তবায়নে এটি সহায়ক হবে এবং এটি তার অভিবাসনবিরোধী অভিযানগুলোর অংশ—যার আওতায় ইতোমধ্যে বহিষ্কার, কর্মক্ষেত্রে অভিযান এবং এলিয়েন এনিমিস অ্যাক্স ব্যবহার করে ভেনেজুয়েলান অভিবাসীদের ফেরত পাঠানো হয়েছে।
অধিকারকর্মীরা বলছেন, আইআরএস-ডিএইচএস-এর মধ্যে হওয়া তথ্য আদান-প্রদান আইন লঙ্ঘন করে এবং এতে সব আমেরিকানদের গোপনীয়তা হ্রাস পায়।
ট্রেজারির এক কর্মকর্তা, যিনি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, বলেন চুক্তির ভিত্তি হচ্ছে কংগ্রেস কর্তৃক প্রদত্ত দীর্ঘস্থায়ী ক্ষমতা, যা আইন মান্যকারী নাগরিকদের গোপনীয়তা রক্ষা করে এবং অপরাধীদের শনাক্ত করায় সহায়তা করে।
আইসিই-এর ভারপ্রাপ্ত পরিচালক টড লায়ন্স অ্যারিজোনার ফিনিক্সে সাংবাদিকদের বলেন, এই চুক্তির মাধ্যমে এমন অভিবাসীদের খুঁজে বের করা সম্ভব হবে, যারা অন্য কারও পরিচয়ে বেআইনিভাবে সুবিধা নিচ্ছেন। তিনি বলেন, ট্রেজারি ও অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে আমাদের কাজ শুধুমাত্র বড় অপরাধমূলক মামলাগুলোর জন্য।
এ বছর শুরুর দিকে অভিবাসন অভিযানকে সহায়তা করার জন্য আইআরএসকে একবার ইতোমধ্যেই ডাকা হয়েছিল।
ফেব্রুয়ারিতে, নোম নামের এক কর্মকর্তা আইআরএসের ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন শাখার কর্মীদের ধার নেয়ার অনুরোধ করেন, সেই চিঠি অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস পেয়েছে।
ট্যাক্স বিশেষজ্ঞরা সোমবার এক বিবৃতিতে বলেন, এই চুক্তি যে সমস্ত আইনের মাধ্যমে করদাতাদের তথ্য সুরক্ষিত থাকে, তা লঙ্ঘনের ঝুঁকি তৈরি করে।
তারা বলেন, আসলে, করদাতার গোপনীয়তা আইন মেনে ডিএইচএসকে তথ্য দেওয়া আইআরএসের পক্ষে প্রায় অসম্ভব। এ ধরনের তথ্য শেয়ারিংয়ে সই করা কর্মকর্তারা আইনের লঙ্ঘন করতে পারেন এবং তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি ও দেওয়ানি ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।”
মেমোতে বলা হয়েছে, আইআরএস ও আইসিই তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যক্তির গোপনীয়তার অধিকারকে স্বীকৃতি দেবে এবং আইন, বিধিমালা ও সুশাসন মেনে চলবে।