বিকলাঙ্গ মানুষদের প্রতিবাদ এবং প্রতিবাদীদের গ্রেফতারের খবর নিশ্চয়ই নৃশংসতা। নির্দয় এবং ভয়াবহ অমানবিকতা। এমন ঘটনা নিউইয়র্কে অনাকাঙ্ক্ষিত। ভয়ানক অপরাধ দমন অথবা আমেরিকার স্বার্থ বিরোধীদের দুর্বল করার জন্যে গড়া বাহিনীকে নিরপরাধী নিজস্ব মানুষদেরকে কষ্ট দিতে ব্যবহার করাই বাহাদুরি নেই। নেই কোনো মর্যাদা।
প্রভাবশালী সিনেটর গুস্তাভো রিভেরার উত্তাপিত বিল নং ১১৮৯ কো-স্পন্সর করেছেন ৩৯ জন সিনেটর। বিলটির উপর ভোট নিতে প্রয়োজন মাত্র ৩২ জন। অথচ প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত সমর্থন এখন ই হয়ে গেছে।কেউই আর বাধা দিয়ে আটকাতে পারবেন না এই বিল উত্থাপন এবং ভোটাভুটি ।
তবে স্পীকার, মেজরিটি লিডার ভোট না দেয়ার পক্ষে আছেন কট্টর অবস্থানে। গভর্নর সূচনা থেকে এই দুই লিডারসহ একমত হলেও তিনি কিছুটা নমনীয় বলে শোনা যাচ্ছে।স্বার্থের শৃঙ্খলে আবদ্ধ থাকা কট্টরপন্থী এই কজনও শেষ পর্যন্ত মধ্যপন্থি হবেন আশা করা যায়।যতই হোক, শেষ পর্যন্ত সবাই দীর্ঘকালের রাজনৈতিক সতীর্থ এবং বন্ধু। নিউইয়র্কবাসীদের মধ্যে বিভেদ বিবাদের এবং দলের ভেতরে একতার উপর ঝড়ের ঝুঁকি কি নেবেন তারা? মনেতো হয়না। এজন্যেই ধৈর্যের পরীক্ষায় আমরা সবাই।
এই বিলে প্রচলিত সিডিপ্যাপ সেবা আগের মতো অব্যাহত রাখার জন্যে রয়েছে প্রস্তাব।এই প্রস্তাবের সারকথা হচ্ছে, “সিডিপ্যাপ সেবা কার্যক্রম চলতি ধারায় রাখার মেয়াদ বৃদ্ধি করা জরুরি”। এতে সমর্থন রয়েছে মেজরিটি সিনেটরদের।আমাদের আন্দোলনও সেবাগ্রহীতা সেবাদাতাদের রক্ষার পক্ষে। আমাদের দাবি সমঝোতার যুক্তিতে নমনীয়। ইতিমধ্যে আরো দুটি আসছে আরো দুই সিনেটরদের স্পনসরে। বিশাল এই জনমত নিউইয়র্কবাসী দের বিবেকেরই প্রতিফলন।
সিডিপ্যাপ সেবাকে বিপথে ঠেলে দিয়ে মানুষের অসুস্থ অসহায় জীবনে আমেরিকান সর্বোচ্চ সভ্যতার সুনামকে প্রশ্নবিদ্ধ করার ভুল পদক্ষেপ হচ্ছে; অন্যান্য স্টেটে বিতর্কিত এবং অভিযুক্ত পিপিএলের একক কর্তৃত্বকে নিউইয়র্কবাসীর উপর চাপিয়ে দেয়া।
অন্যান্য স্টেটে অভিজ্ঞতার নিরিখে ভয় বিস্তার হয়েছে নিউইয়র্কে সিডিপ্যাপ সেবা গ্রহণকারীদের মধ্যে।
সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি বিকলাঙ্গদের মাঝে।বৃদ্ধ এবং হাটাচলায় অক্ষম একা মানুষদের আতঙ্কের দুর্বিষহ বিপদে ওদের কান্নাকাটির উপরও নিষেধ আরোপ হয়েছে নিউইয়র্কে।প্রবাদ এবং ক্ষোভ,কান্না এবং আর্তচিৎকারকারী হুইলচেয়ারে চলাচলকারীদেরও রেহাই নেই।
বিশেষ নিষ্ঠুর বাহিনী লেলিয়ে দিচ্ছে এই নিরীহদের বেদনা ও বিক্ষোভ দৃশ্য থেকে আড়ালের চেষ্টায়।আর এদিকে স্টেট গভর্নর এবং সিটি মেয়রের পক্ষ থেকে বুলেটিন প্রচার চলছে সেবায় যত্নে নিউইয়র্কে খুবই গুরুত্ব পাচ্ছে নাগরিরা।
মানুষের ভোটে অতি মর্যাদাবান পদবিধারী রাজনৈতিক ব্যক্তিরা এই সম্মানজনক সুযোগকে অমানবিক ক্ষমতা প্রয়োগে তৎপর হয়েছে।এই নিরীহ অসুস্থ বৃদ্ধ বিকলাঙ্গ ভোটারদের উপর উৎপাত এবং চড়াও হওয়ার ঘটনার সাথে উন্নত সমাজ সভ্যতার নিউইয়র্কের ঐতিহ্যের সংগতি ছিন্ন করছে বর্তমান প্রশাসন।
এই পরিস্থিতি নিউইয়র্কের রাজনৈতিক পরিবেশকে কলুষিত করছে। ডেমোক্রেটিক মূল্যবোধের মুখে কয়লা এবং নোংরা দুর্গন্ধ লেপে দিয়ে ডেমোক্রেসি প্রশ্নবিদ্ধ করার স্পষ্ট অভিযোগ তুলে ধরার উসকানি দিচ্ছে।
উগ্রবাদী, উত্তেজক, বৈষম্যপন্থী,বিশৃঙ্খলাবাদী এবং বিদ্বেষপন্থীদেরকে পৃষ্ঠপোষকতার পথ করে দিচ্ছে।যাতে ভয়ানক অপরাধে যুক্ত লোকরা অঘটন ঘটিয়ে প্রাণের এবং সমাজের সুসংহতির ক্ষতি করতে পারে।
তাই ভুক্তভোগী মানুষদের অন্তত কাঁদতে দিন।মনের কথা বলতে দিন। সমাজে কল্যাণের পক্ষে তাদের যুক্তি প্রকাশ করতে দিন। আপনাদের অনাচার অবিচার এবং পক্ষপাতদুষ্ট লোভ লালসার শিকার নির্দোষ ভুক্তভোগীদের অধিকার হরণের প্রশ্নে ভাব বিনিময় করতে দিন।
নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি এবং তাদের ভোটার জনসাধারণ মিলেই সমগ্র সমাজ অগ্রসরের অনিবার্য উপাদান।কথাটা যেন কেউই ভুলে না যাই। নিউইয়র্ক রাজনীতিতে কট্টর উগ্রপন্থার কোনো স্থান এখন পর্যন্ত নেই। সবাই এ দল অদল আমরা প্রত্যেকেই মধ্যপন্থি।
লেখক : স্যার ড. আবু জাফর মাহমুদ, প্রতিষ্ঠাতা, বাংলা সিডিপ্যাপ সার্ভিসেস ও অ্যালেগ্রা হোম কেয়ার