জেবি টিভি রিপোর্ট : সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে নিউইয়র্ক স্টেট এর হোম কেয়ার সেবা বন্ধের উদ্যোগের বিরুদ্ধে বিভিন্নমুখি তৎপরতা শুরু হয়েছে।
এ আইনগত উদ্যোগের পাশ দাঁড়িয়েছেন মিশিগানের লিভিংস্টন কাউন্টির একজন বিচারক । মঙ্গলবার, মিশিগানের লিভিংস্টন কাউন্টির একজন বিচারক নিউ ইয়র্ক স্টেট স্বাস্থ্য অধিদপ্তর (ডিওএইচ) এর বিরুদ্ধে একটি অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ জারি করেছেন যা এই স্টেটের কনজিউমার ডাইরেক্টেড পার্সোনাল অ্যাসিস্ট্যান্স প্রোগ্রামের (সিডিপ্যাপ) হস্তান্তর প্রক্রিয়ার অন্তত একটা অংশে প্রভাব ফেলবে।
যেখানে বলা হয়, গ্লিডেডোয়ান, এলএলসি ডি/বি/এ অল-আমেরিকান হোমকেয়ার বনাম নিউ ইয়র্ক স্টেট ডিপার্টমেন্ট অফ হেলথ (ডিওএইচ) মধ্যকার একটি মামলা চলমান। এই মামলায় ডিওএইচ সেবা গ্রহনকারী এবং প্রদানকারীদেরকে যে “যেকোনো তৃতীয় পক্ষের” তথ্য জানাতে বা “চলমান হস্তান্তর সম্পর্কে অবহিত করতে” বাধ্য করেছিলো, তা অস্থায়ীভাবে স্থগিত করে।
এই পদক্ষেপটি নিউ ইয়র্ক স্টেটের সিডিপ্যাপের বিতর্কিত হস্তান্তর সিদ্ধান্তের সর্বশেষ অগ্রগতি বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশি কমিউনিটিতে হোম কেয়ার সেবা প্রতিষ্ঠানের প্রথিকৃৎ স্যার ডক্টর আবু জাফর মাহমুদ ।
বুধবার এক ইমেল বিবৃতিতে গভর্নরের মুখপাত্র স্যাম স্পোকোনি বলেছেন এই অর্ডার সিডিপ্যাপের শুধুমাত্র একটি ছোট্ট অংশকে ঘিরে যা অর্থ গ্রহন প্রকিয়ার সাথে সম্পর্কিত। এ বছরের এপ্রিলের শুরুকে হতে চলা হস্তান্তরের মুল প্রক্রিয়াকে কোনভাবে বাধা প্রদান করবেনা।
উল্লেখ্য, সিডিপ্যাপ নিউইয়র্কে অসাধারণ জনপ্রিয় এবং জরুরি সেবা কর্মসূচি। একই পরিবারের; একই সমাজের পরিচিতজনদের পারস্পারিক জানাজানির ভিত্তিতে এই সেবাকর্ম নেওয়া এবং দেওয়ার কর্মসূচি চলে আসছে। এই কার্যক্রম সফলতা অর্জন করেছে সূচনাকাল থেকেই। এর পেছনে বড় দিকটি হচ্ছে সেবাগ্রহীতা এবং সেবাদানকারী পরস্পর পরস্পরের পরিচিত এবং যে কাজ করে সে সেবা গ্রহীতাকে সম্পূর্ণরূপে জানে এবং দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন, সেবা গ্রহীতাও সেবা গানকারীকে একইভাবে জানে। একে অন্যের সঙ্গে পারস্পরিক ভাষাগত, শারিরীক, মনস্তাত্তিক, পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধে যুক্ত। পরস্পর পরস্পরের পছন্দ-অপছন্দ সম্পর্কে অবগত। সিডিপ্যাপ প্রোগ্রামে সেবাদানের ক্ষেত্রে সামাজিক মনস্তত্ত্ব ও এই জানাশোনা খুবই জরুরি। হোম কেয়ারের অন্যান্য কর্মসূচিতে সম্পর্কের এই সৌন্দর্যটা নেই।
সিডিপ্যাপ গ্রহীতা এবং সেবাদানকারী এদেরকে একটি কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ঠেলে দিয়ে মানুষের মূল্যবোধ, পছন্দ-অপছন্দ, সুযোগ-সুবিধা ইত্যাদি জানা নেই এমন একটি প্রতিষ্ঠানকে সারা নিউ ইয়ার্কবাসীর সেবাদানের দায়িত্ব দিয়ে গভর্নর যে উদ্যোগ নিয়েছিলেন সেটি ভয়ানক বির্তকের জন্ম দিয়েছে।
গভর্নরের এই সিদ্ধান্তে নিউইয়র্কের সকল সমাজের ভিতরে চরম ক্ষোভ-বিক্ষোভ জন্ম নিয়েছে। এর লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছেন শুধু গভর্নর নন, নিউইয়র্ক স্টেটের প্রত্যেকটি নির্বাচিত প্রতিনিধি। কারণ এই জনপ্রতিনিধিরা সমাজের তৃণমূলের কম আয়ের নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের ভোটের ওপর নির্ভর করেই প্রভাব বিস্তার করেন। দীর্ঘকাল ধরে নিউইয়র্কে এই প্রোগ্রাম সফলভাবে যারা পরিচালনা করেছেন, তাদের আন্তরিকতা ও অভিজ্ঞতাকে বিবেচনায় না নিয়ে নিউইয়র্কবাসীর অপরিচিত যে প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাতে নিশ্চিত বলা যায়,সিডিপ্যাপ প্রোগ্রাম মুখ থুবড়ে পড়বে বা ব্যর্থ হবে।
এই ব্যর্থতার দায় নিয়ে কাউকে অভিযোগ করা যাবে, আর কেউ অভিযোগ থেকে মুক্তির চেষ্টাও করবেন, অজুহাতের যুক্তিও দিতে সুযোগ পাবেন।তবে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, তারা ক্ষতিগ্রস্তই হবেন।এদের প্রতি ডিসক্রিমিনেশন করা কি সভ্য সমাজ ও উন্নত মূল্যবোধে মানায়?
উল্লেখ্য, নিউইয়র্ক স্টেট এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী ৬০০-৭০০ লাইসেন্সড সিডিপ্যাপ এজেন্সী রয়েছে, যেখানে নুন্নতম ১০০০০ মানুষ কর্মরত। প্রতক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে ৫০ হাজার মানুষ এই উপার্জনের ওপর নির্ভরশীল। যদি সিডিপ্যাপ এজেন্সী গুলো বন্ধ হয়ে যায় তাহলে এই মানুষগুলো কিভাবে জীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। এর দায় দায়িত্ব বর্তাবে নিউজ স্টেট গভর্ণর ও নির্বাচিত প্রতিনিধিদের ওপর।
এ ছাড়াও এজেন্সীগুলোর অফিস স্পেস , ইকুইপমেন্ট সকল কিছু নিয়ে কি করবে, কোথায় যাবে ? লিজ নিয়ে সমস্যা হবে ল্যান্ডলর্ড এর সাথে। যেখানে একটি জটিল পরিস্থিতির উদ্ভব হবে।
নিউইয়র্ক তথা আমেরিকার প্রথম হোম কেয়ার প্রতিষ্ঠান বাংলা সিডিপ্যাপ সার্ভিসেস এর কথাই ধরা যাক। এই প্রতিষ্ঠানের একটি কর্পোরেট অফিসসহ আটটি অফিস রয়েছে। জ্যাকসন হাইটস (কর্পোরেট ও ব্রাঞ্চ অফিস), ব্রুকলিন অফিস, ওজোনপার্ক অফিস, জ্যামাইকা অফিস, ব্রংকস অফিস, বাফেলো অফিস ও আলবানী অফিস। এসব অফিসের ভাড়া ৭ থেকে ১০ হাজার ডলার। অফিস পরিচালনার অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয় রয়েছে। প্রতি ব্রাঞ্চে ৫ জনের বেশি কর্মী রয়েছেন। যাদের প্রত্যেকের বেতন দক্ষতা, দায়িত্ব পরিধি ও পদ অনুযায়ী ফেডারেল সরকার, নিউইয়র্ক স্টেট ও নিউইয়র্ক সিটির মজুরিবিধি অনুসরণ করেই প্রদান করা হয়। সব মিলিয়ে অফিসগুলির পরিচালনা ব্যয়, ভাড়া, দায়িত্ব পালনকারীদের বেতন, মার্কেটারদের বেতন মজুরি মিলিয়ে বড় একটি ব্যায়ের খাত রয়েছে। বলা বাহুল্য এই বড় কর্মপরিবেশ গড়ে উঠেছে কাঙ্ক্ষিত সেবা দানের সফলতা ও সেবাগ্রহীতাদের বিপুল আস্থার মধ্য দিয়ে। ক্ষুদ্র ব্যবসা পরিচালনাকারী এমন এজেন্সি রয়েছে ৬’শ থেকে ৭’শ। সিডিপ্যাপ বন্ধ হলে সেবাগ্রহীতাদের পাশাপাশি সার্ভিস পরিচালনায় দক্ষ হাজার হাজার কর্মজীবী বেকার হয়ে পড়বেন। এতসব অফিসের সঙ্গে ন্যুনতম পাঁচবছর থেকে দশ বছর পর্যন্ত চুক্তি রয়েছে। আকস্মিকভাবে এগুলো বন্ধ করার মতো কোনো পরিবেশও নেই । এই বিপুল লোকসান, আর্থিক ক্ষতির দায়ভার গভর্নর তথা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদেরকেই বহন করতে হবে।