joybangladesh.tv
Saturday, May 31, 2025

যুক্তরাষ্ট্রে গ্রিনকার্ড প্রত্যাশীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম যাচায়ের প্রস্তাব ট্রাম্প প্রশাসনের

Share

জেবি টিভি রিপোর্ট : এখন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে বৈধভাবে বসবাসরত গ্রিন কার্ড আবেদনকারীদের তাদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্রোফাইল পর্যালোচনার জন্য জমা দিতে হবে। এর আগে কেবলমাত্র দেশের বাইরে থেকে আসা ভিসা আবেদনকারীদের এই তথ্য সরবরাহ করতে হতো। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন এ সংক্রান্ত একটি নতুন নীতির প্রস্তাব করেছে ।

যেখানে বলা হয়েছেম এখন মার্কিন নাগরিকত্ব ও অভিবাসন পরিষেবা (ইউএসসিআইএস) চায় এই প্রক্রিয়াটি স্থায়ী বাসিন্দা ও আশ্রয়প্রার্থী হিসেবে আবেদন করা ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য করতে।

ইউএসসিআইএসের দাবি , আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে এই পদক্ষেপটি প্রয়োজন। সংস্থাটির মতে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পর্যালোচনা করলে পরিচয় যাচাই এবং সম্ভাব্য নিরাপত্তা হুমকিগুলো শনাক্ত করা সহজ হবে। এই নীতিটি ‘বিদেশি সন্ত্রাসীদের এবং অন্যান্য জাতীয় নিরাপত্তা ও জননিরাপত্তার হুমকিগুলো থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে রক্ষা করা’ শীর্ষক একটি নির্বাহী আদেশের সঙ্গে সংযুক্ত।

কর্মকর্তারা বলছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে তারা বিপজ্জনক সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার সুযোগ বন্ধ করতে পারবেন। তাদের যুক্তি এই ধরনের যাচাই প্রক্রিয়া ইতোমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশকারীদের জন্য প্রযোজ্য, তাই এটি অভ্যন্তরীণ আবেদনকারীদের ক্ষেত্রেও কার্যকর করা উচিত।

এদিকে ট্রাম্প প্রশাসনের এই এই প্রস্তাবটি নাগরিক অধিকার সংগঠন ও সাধারণ জনগণের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি বাকস্বাধীনতা ও গোপনীয়তার অধিকারের লঙ্ঘন। তাদের মতে এই নীতির ফলে অভিবাসীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের মতামত প্রকাশ করতে ভয় পেতে পারেন, কারণ তাদের পোস্ট ভুলভাবে ব্যাখ্যা করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হতে পারে।

অনেকে আশঙ্কা করছেন, এই নীতির ফলে নির্দিষ্ট ধর্মীয় ও জাতিগত গোষ্ঠীগুলোর মানুষ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, বিশেষত যারা মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির সমালোচনা করেছেন। এমনকি যুক্তরাষ্ট্র সরকার বা তার মিত্রদের বিরুদ্ধে সমালোচনামূলক পোস্ট লাইক বা শেয়ার করলেও আবেদন বাতিল হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।

 

এই প্রস্তাব এমন এক সময়ে এসেছে, যখন অভিবাসীদের ওপর দমন-পীড়ন বাড়ছে, যার মধ্যে স্থায়ী বাসিন্দা ও ভিসাধারীরাও অন্তর্ভুক্ত। সম্প্রতি এমন কিছু ঘটনা ঘটেছে, যেখানে গ্রিন কার্ডধারী এবং ভিসাধারীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পর্যালোচনা করার পর আটক বা দেশ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

মাহমুদ খলিল একজন গ্রিন কার্ডধারী, ট্রাম্প প্রশাসনের তাকে ‘প্রো-হামাস’ বলে চিহ্নিত করার পর আটক হন।

ব্রাউন ইউনিভার্সিটির চিকিৎসক ও এইচ-১বি ভিসাধারী রাশা আলাওয়িহকে নির্বাসিত করা হয়, কারণ মার্কিন কর্মকর্তারা তার ফোন পর্যালোচনা করে দাবি করেন— তিনি হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহর ধর্মীয় শিক্ষাগুলো অনুসরণ করতেন এবং লেবাননে তার জানাজায় উপস্থিত ছিলেন।

ফাবিয়ান স্মিডট একজন জার্মান বৈদ্যুতিক প্রকৌশলী ও ২০০৮ সাল থেকে গ্রিন কার্ডধারী, তাকে বোস্টন লোগান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আটক করা হয়। মিলওয়াকির এক মা যিনি যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী বাসিন্দা ছিলেন, তাকে লাওস নির্বাসিত করা হয়—যে দেশে তিনি কখনো যাননি—কারণ তিনি গাঁজাসংক্রান্ত অভিযোগের জন্য একটি আপসমূলক চুক্তিতে সম্মত হয়েছিলেন।

এছাড়াও, খবরে বলা হচ্ছে যে অভিবাসন ও শুল্ক প্রয়োগ সংস্থা (আইসিই) অভিবাসীদের খুঁজে বের করতে অভ্যন্তরীণ রাজস্ব সংস্থার (আইআরএস) গোপন কর সংক্রান্ত তথ্য ব্যবহারের বিষয়ে একটি চুক্তির কাছাকাছি পৌঁছেছে। কিছু আইআরএস কর্মকর্তা সতর্ক করেছেন, এই পদক্ষেপের ফলে ব্যক্তিগত আর্থিক তথ্যের অপব্যবহারের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।

ট্রাম্প প্রশাসন অভিবাসন নীতিকে কঠোর করে তোলার সঙ্গে সঙ্গে অনেকেই ব্যক্তিগত স্বাধীনতার দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব নিয়ে উদ্বিগ্ন, বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে, যাতে সরকারি প্রতিশোধের ভয় না থাকে।

আরও পড়ুন

আরও সংবাদ