জেবি টিভি রিপোর্ট : যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির এমপি টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে বাংলাদেশের তদন্তকারীদের সহায়তা করছে ব্রিটেনের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (এনসিএ)। যুক্তরাজ্যের অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাবেক ইকোনমিক সেক্রেটারি টিউলিপ বিতর্কিত একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তি থেকে লাভবান হয়েছেন, এমন অভিযোগ তদন্তে যুক্ত কর্তৃপক্ষকে সহায়তা করার জন্য এনসিএর কর্মকর্তারা যুক্তরাজ্য থেকে ঢাকায় এসেছিলেন।
রোববার যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। টিউলিপ সিদ্দিক বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার মেয়ে। গত বছরের ৫ আগস্ট গণ–অভ্যুত্থানের মুখে পতন হয় শেখ হাসিনা সরকারের। অভিযোগ রয়েছে, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকার সময় বিভিন্ন সুবিধা পেয়েছিলেন টিউলিপ।
যু্ক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগ নেতাদের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বাসায় টিউলিপ সিদ্দিকের বসবাস নিয়েও সম্প্রতি বিতর্ক দেখা দেয়। এসব আলোচনা–সমালোচনার মুখে গত মাসে যুক্তরাজ্যের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনীতিবিষয়ক মিনিস্টারের (ইকোনমিক সেক্রেটারি) পদ ছাড়েন তিনি। ওই পদে দেশটির আর্থিক খাতে দুর্নীতি বন্ধের দায়িত্বে ছিলেন টিউলিপ।
বাংলাদেশে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে অর্থায়ন করছে রাশিয়া। এই প্রকল্প থেকে ৩৯০ কোটি পাউন্ড আত্মসাতের অভিযোগে টিউলিপ সিদ্দিক, শেখ হাসিনা এবং তাঁদের পরিবারের অন্য সদস্যদের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এই তদন্তে ব্রিটিশ পুলিশের সম্পৃক্ততার বিষয়টি এখন প্রকাশিত হয়েছে। শেখ হাসিনা ও তাঁর মিত্রদের পাচার করা বিপুল পরিমাণ অর্থ উদ্ধারে বাংলাদেশ সরকারকে সহায়তা করার জন্য গত বছরের অক্টোবরে প্রথম ঢাকায় আসেন এনসিএর কর্মকর্তারা। জানা গেছে, তাঁরা বাংলাদেশে মামলা করার জন্য বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষকে সহযোগিতা করার প্রস্তাব দিয়েছেন।
বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এনসিএ কর্মকর্তাদের বৈঠকে যুক্তরাজ্যে লন্ডনের হ্যাম্পস্টিড অ্যান্ড হাইগেট এলাকার এমপি টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য ফৌজদারি মামলা করার জন্য তথ্য–প্রমাণ সংগ্রহের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
বৈঠকগুলোতে এনসিএ কর্মকর্তারা সুনির্দিষ্টভাবে টিউলিপ সিদ্দিকের বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন করেছেন বলে সূত্র দাবি করেছে। টিউলিপ সিদ্দিক অবশ্য কোনো ধরনের অনিয়মের সঙ্গে যুক্ত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন।
যুক্তরাজ্য–সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক ঘুষ ও দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তের দায়িত্বে থাকা ব্রিটিশ সংস্থাগুলোর একটি এনসিএ। রাজনৈতিক দুর্নীতির মাধ্যমে বিদেশ থেকে যুক্তরাজ্যে অর্থ পাচারের অভিযোগ ওঠা কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে তদন্ত করতে পারে তারা। একই সঙ্গে যুক্তরাজ্যের নাগরিকদের বিরুদ্ধে ঘুষ ও দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করে থাকে এনসিএ।
ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে শেখ হাসিনা (৭৭) ভারতে অবস্থান করছেন। তিনি ক্ষমতায় থাকাকালে বিরোধীদের ওপর হামলা, গোপন বন্দিশালায় আটক রাখা ও বিচাবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছিল। শেখ হাসিনা ও তাঁর মিত্ররা বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
শেখ হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে টিউলিপ সিদ্দিকের হিসাব ও লেনদেনের তথ্য চেয়েছে দেশটিতে অর্থ পাচার রোধে কাজ করা সংস্থা। টিউলিপের মা শেখ রেহানা, ভাই, বোনসহ তাঁর পরিবারের ছয় সদস্যের অর্থিক লেনদেনের তথ্যও চেয়েছে সংস্থাটি।
টিউলিপ সিদ্দিকের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ‘এসব অভিযোগের সপক্ষে কোনো তথ্য–প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি। এসব বিষয়ে টিউলিপ সিদ্দিকের সঙ্গে যোগাযোগও করা হয়নি। তিনি এসব দাবি পুরোপুরি নাকচ করেছেন।’
জানতে চাইলে এনসিএর একজন মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা সাধারণত আন্তর্জাতিক সহায়তার ধরন সম্পর্কে মন্তব্য করি না। তা ছাড়া সংস্থাটি (এনসিএ) কোনো তদন্ত শুরু করলে বা কোনো অংশীদারের তদন্তে সহায়তার করলে তা নিশ্চিত বা নাকচ করাও হয় না।’
এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা টেলিগ্রাফকে বলেছেন, ‘টিউলিপ সিদ্দিককে নিয়ে তদন্ত এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। তবে আমরা সক্রিয়ভাবে বিভিন্ন দিক থেকে পরীক্ষা–নিরীক্ষা করে চলেছি। আমাদের অনুসন্ধানের লক্ষ্য হলো, বাংলাদেশে অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থ দিয়ে সম্পদ কেনা ও তাঁর (টিউলিপ) মধ্যে কোনো যোগসূত্র আছে কি না, সেটা বের করা, দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ এবং বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচারের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা আছে কি না, তা বের করা।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্য ও অন্যান্য দেশে পাচার হওয়া শত শত কোটি ডলারের খুঁজে বের করতে আমাদের প্রচেষ্টায় ব্রিটিশ সরকার ও আন্তর্জাতিক তদন্ত সংস্থাগুলোর সহায়তাকে আমরা আন্তরিকভাবে প্রশংসা করছি।’
আহসান এইচ মনসুর আরও বলেন, ‘যুক্তরাজ্য এই প্রচেষ্টায় আমাদের সহায়তা করছে। আমাদের পরবর্তী কাজ হলো যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশের যেসব ব্যাংক হিসাব পাচার হওয়া অর্থ গেছে এবং সেই অর্থ দিয়ে যেসব সম্পদ কেনা হয়েছে, সেগুলো খুঁজে বের করা। এসব অর্থ উদ্ধারের জন্য আমরা জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ এবং দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’