জেবি টিভি রিপোর্ট : ফেডারেলের পক্ষ থেকে ঘুষ, ষড়যন্ত্র এবং নির্বাচনী অর্থায়নের অভিযোগে এনে যে দোষী সাব্যস্তের চেষ্টা তা সঠিক নয় বলে দাবি করেছেন নিউ ইয়র্ক সিটির মেয়র এরিক অ্যাডামস । শুক্রবার আদালতে হাজিরা দেওয়ার সময় তিনি এ দাবি করেন।
এদিকে বৃহস্পতিবার প্রকাশিত একটি ৫৭ পৃষ্ঠার বিশাল অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, অ্যাডামস প্রায় এক দশক ধরে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন এবং তার নিজের জনগণের স্বার্থের চেয়ে বিদেশী নাগরিকদের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন।
কিন্তু শুক্রবার আদালতে হাজির হয়ে এরিক বললেন “আমি দোষী নই, মাননীয় বিচারক”
এদিকে আদালতে বিচারক অ্যাডামসকে তার অধিকার পড়ে শোনানোর পর তিনি জনসমক্ষে অভিযোগপত্রের পাঠ প্রত্যাখ্যান করেন এবং নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন।
অ্যাডামস জামিনে মুক্তি পান এবং আদালতের বাইরে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেননি। বরং তিনি তার আইনজীবীর পাশে দাঁড়ান, যিনি সংবাদমাধ্যমের সাথে কথা বলেন।
অ্যাটর্নি অ্যালেক্স স্পাইরো অ্যাডামসের মামলাকে প্রাক্তন নিউ ইয়র্কের লেফটেন্যান্ট গভর্নর ব্রায়ান বেনজামিনের মামলার সাথে তুলনা করেন, যাকে একটি রিয়েল এস্টেট ডেভেলপার থেকে নির্বাচনী অনুদান গ্রহণ করার অভিযোগে ঘুষ ও প্রতারণার জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছিল।
স্পাইরো বলেন, “আমরা সবাই ব্রায়ান বেনজামিনের মামলাটি মনে করি। একই রকম, দুর্বল তত্ত্ব। সেই মামলাটি খারিজ করা হয়েছিল। একই প্রসিকিউটর, একই তত্ত্ব। কিন্তু এই মামলার জাঁকজমক তাদের এতটাই উত্তেজিত করেছে যে তারা এমন আরেকটি মামলা আনতে চেয়েছে।
বেনজামিন ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে তার অভিযোগের পর পদত্যাগ করেন। আট মাস পর অভিযোগগুলি খারিজ করা হয়েছিল, তবে এই বছর শুরুর দিকে একটি ফেডারেল আপিল আদালত সেগুলি পুনরুদ্ধার করে।
এদিকে, অ্যাডামসের পরবর্তী আদালতে হাজিরা ২ অক্টোবর নির্ধারিত হয়েছে। “আমরা আদালতকে জানিয়েছি যে আগামী সপ্তাহে আমরা অভিযোগ খারিজের আবেদন করব। আমরা আশা করি এই অভিযোগগুলি খারিজ করা হবে,” স্পাইরো বলেন।
শুক্রবার সকালে অ্যাডামস গ্রেসি ম্যানশন ছেড়ে যান এবং সকাল ৮:৪৫ টার দিকে আদালতে পৌঁছান, যেখানে তিনি বাইরে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের দিকে থাম্বস-আপ ইশারা করেন। তার হাজিরা দুপুরের দিকে শুরু হয়, যখন তাকে প্রক্রিয়াকরণ করা হয় এবং তিনি দোষী নয় বলে দাবি করেন।
অ্যাডামস তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠার পর থেকে নিজের নির্দোষতা বজায় রেখেছেন এবং বলেছেন যে তিনি আদালতে অভিযোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য প্রস্তুত।
“আমি নিয়ম মেনে চলি, আমি আইন মেনে চলি। আমি এমন কিছু করি না যা অবৈধ নির্বাচনী কার্যকলাপে জড়িত,” তিনি বৃহস্পতিবার গ্রেসি ম্যানশনের বাইরে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন।
অ্যাডামস নিউ ইয়র্ক সিটির প্রথম মেয়র যিনি ফেডারেল অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন। পাঁচটি অভিযোগে দোষী প্রমাণিত হলে, তিনি ৪৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের মুখোমুখি হতে পারেন।
বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে, মার্কিন অ্যাটর্নি ড্যামিয়ান উইলিয়ামস নিউ ইয়র্ক সিটি মেয়র এরিক অ্যাডামসের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগের বিস্তারিত তুলে ধরেন।
অভিযোগে বলা হয়েছে, মেয়র বিলাসবহুল ভ্রমণ এবং ধনী বিদেশি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অবৈধ নির্বাচনী অনুদান সহ অনুপযুক্ত উপহার গ্রহণ করেছেন এবং অন্তত একজন তুর্কি সরকারি কর্মকর্তার কাছ থেকে উপহার পেয়েছেন। তার গোপন ভ্রমণের সময়কাল ২০১৬ সাল থেকে শুরু হয়ে ১০০,০০০ ডলারেরও বেশি।
“বছরের পর বছর ধরে, তিনি জনগণকে অন্ধকারে রেখেছেন, তিনি জনগণকে জানিয়েছেন যে তিনি কোনো উপহার গ্রহণ করেননি, যদিও তিনি গোপনে উপহারে সিক্ত হচ্ছিলেন,” নিউ ইয়র্কের দক্ষিণ জেলার মার্কিন জেলা অ্যাটর্নি ড্যামিয়ান উইলিয়ামস বলেন।
প্রসিকিউটররা বলেছেন, অবৈধ নির্বাচনী অনুদানগুলি ভুয়া দাতাদের মাধ্যমে এসেছে — এমন লোকেরা যারা অবৈধ উৎস গোপন করতে অন্যের অর্থ প্রদান করে। অবৈধ সুবিধার বিনিময়ে, অ্যাডামসের বিরুদ্ধে তার প্রভাব ব্যবহার করে FDNY-কে ম্যানহাটনে তুরস্কের কনস্যুলেটের একটি নতুন উচ্চতর আবাসন খোলার জন্য চাপ দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে, নিরাপত্তা উদ্বেগ থাকা সত্ত্বেও।
“আইনগুলি নিশ্চিত করার জন্য তৈরি করা হয়েছে যে তার মতো কর্মকর্তারা জনগণের সেবা করবেন, সবচেয়ে বেশি অর্থ প্রদানকারী বা কোনো বিদেশি শক্তির জন্য নয়,” উইলিয়ামস বলেন।
অভিযোগে আরও বিস্তারিতভাবে বলা হয়েছে, মেয়র তাদের অপরাধমূলক কার্যকলাপ আড়াল করার চেষ্টা করেছিলেন, যেখানে তার নির্বাচনী তহবিল সংগ্রহকারী এফবিআই তার দরজায় অনুসন্ধান পরোয়ানা নিয়ে উপস্থিত হলে তাকে পাঁচবার ফোন করেছিলেন। অভিযোগে বলা হয়েছে, পরে তিনি এফবিআই এজেন্টদের সাথে কথা বলেছেন তবে “কেউ ২০২১ সালের তুরস্ক ভ্রমণের অর্থ কে দিয়েছিল তা বলতে অস্বীকার করেন।”
প্রসিকিউটররা বলেছেন, অন্য একজন কর্মী এফবিআই-এর সাথে কথা বলার জন্য রাজি হয়েছিলেন, কিন্তু পরে “বাথরুমে গিয়ে এনক্রিপ্টেড মেসেজিং অ্যাপ্লিকেশনগুলি মুছে ফেলেন যা তিনি মেয়রের সাথে যোগাযোগ করতে ব্যবহার করেছিলেন।”
অ্যাডামসের উপর চাপ বাড়ছে
এদিকে , অ্যাডামসের বিরুদ্ধে পদত্যাগ করার জন্য ক্রমবর্ধমান চাপের সম্মুখীন হচ্ছেন, অনেকেই তার নিজের প্রতিরক্ষা এবং শহর চালানোর ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। তবে তিনি কিছু পুরানো সমর্থকদের কাছ থেকে সমর্থনও পেয়েছেন। তিনি বারবার বলেছেন যে তিনি তার মেয়রের কাজ চালিয়ে যেতে চান।
“কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আমাদের প্রতিরক্ষা শুনুন,” তিনি বৃহস্পতিবার বলেন।
তার ভবিষ্যৎ কী হবে তা অস্পষ্ট, তবে জনমতের চাপ বাড়ার সাথে সাথে অনেকেই ভাবছেন নিউ ইয়র্কের গভর্নর ক্যাথি হোচুল কি হস্তক্ষেপ করবেন। রাজ্য আইনের অধীনে, তাকে পদ থেকে সরানোর ক্ষমতা তার রয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাতে এক বিবৃতিতে হোচুল বলেন, “নিউ ইয়র্ক সিটির জন্য এটি একটি অত্যন্ত কঠিন দিন,” যোগ করে বলেন, “এই অভিযোগগুলি একটি উদ্বেগজনক ধারাবাহিকতার সর্বশেষ উদাহরণ যা অনেক নিউ ইয়র্কবাসীর মধ্যে অস্থিরতার অনুভূতি তৈরি করেছে।”
“আমার লক্ষ্য নিউ ইয়র্কবাসীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং শহরের স্থিতিশীলতা বজায় রাখা। নিউ ইয়র্কের গভর্নর হিসেবে আমার বিকল্পগুলি এবং দায়িত্বগুলি পর্যালোচনা করছি, আমি আশা করি মেয়র আগামী কয়েক দিন তার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করবেন এবং নিউ ইয়র্ক সিটির জনগণ তাদের নেতাদের দ্বারা ভালোভাবে সেবা পাচ্ছেন তা নিশ্চিত করতে একটি উপযুক্ত পথ খুঁজে বের করবেন,” তিনি বলেন।
যদি মেয়র পদত্যাগ করেন বা অপসারিত হন, নিউ ইয়র্ক সিটির পাবলিক অ্যাডভোকেট জুমানে উইলিয়ামস অন্তর্বর্তীকালীনভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। তিনি তারপরে একটি বিশেষ নির্বাচনের ঘোষণা করার জন্য তিন দিন সময় পাবেন, যা ৮০ দিনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হতে হবে।
“জনসাধারণের অ্যাডভোকেট হিসেবে, আমার ভূমিকা হলো নিউ ইয়র্কবাসীরা যে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং শাসন ব্যবস্থা প্রাপ্য তা নিশ্চিত করার জন্য লড়াই করা। একটি কঠিন সময়ে, আমি আমার সহকর্মী নির্বাচিত কর্মকর্তাদের সাথে কাজ করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং আমাদের শহর যে কোনো পরিস্থিতিতে পরিচালনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য নিবেদিত,” পাবলিক অ্যাডভোকেট অভিযোগের পরে এক বিবৃতিতে বলেন।
