joybangladesh.tv
Sunday, June 1, 2025

নিউইয়র্ক স্টেটে সিডিপ্যাপ সেবা বন্ধের প্রতিবাদ : আলবেনিতে ৫ সেবাগ্রহীতা গ্রেফতার

Share

জেবি টিভি রিপোর্ট : নিউ ইয়র্কের কনজিউমার ডাইরেক্টেড পার্সোনাল অ্যাসিসট্যান্স প্রোগ্রাম সিডিপ্যাপ এর উপর নির্ভরশীল ব্যক্তিদের উদ্বেগ তুলে ধরতে আয়োজিত এক বিক্ষোভ থেকে ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ । সোমবার আলবেনিতে ১ এপ্রিলের মধ্যে সিডিপ্যাপ সেবা পুরোপুরি বন্ধ করে পিপিএলের মতো অযোগ্য এক প্রতিষ্ঠানের কাছে সেবা গ্রহীতা, সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠানকে স্থান্তারত বন্ধের প্রতিবাদ কর্মসূচী থেকে এই ৫ জনকে আটক করা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, গ্রেপ্তার যাদের করা হয়েছে এদের মধ্যে অনেকেই প্রতিবন্ধী হোম কেয়ার ব্যবহারকারী ছিলেন । এমন অসহায় রোগীদেের আটক করাতে তাদের মধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে ।

যদিও এমন অভিযোগ নাকচ করে স্টেট পুলিশ জানিয়েছে, প্রতিটি প্রতিবাদকারীকে বিশৃঙ্খল আচরণের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে। পরে তাদের আদালতে হাজিরার জন্য টিকিট দিয়ে মুক্তি দেওয়া হয়।

এদিকে , ১ এপ্রিলের মধ্যে হোম কেয়ার গ্রহণকারী এবং কর্মীদের তাদের সেবাকে একটি নতুন ফিসকাল ইন্টারমিডিয়ারি, পাবলিক পার্টনারশিপস এলএলসি পিপিএলে যে স্থানান্তর করতে হবে তা নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরেই ক্ষোভ ও উত্তেজনা চলছে নিউইয়র্কে বসবাসরত বিভিন্ন জ্ঞাতি গোষ্ঠীর মধ্যে ।

নিউইয়র্কে হোমকেয়ার সেবায় অযোগ্য এই প্রতিষ্ঠান পিপিএলকে সরিয়ে সিডিপ্যাপকে পুর্নবহাল রাখতে এরই মধ্যে একজোট হয়েছেন রাজ্যের সিনেটররা। প্রভাবশালী সিনেটর গুস্তাভো রিভেরার উত্তাপিত বিল নং ১১৮৯ কো-স্পন্সর করেছেন ৩৯ জন সিনেটর। বিলটির উপর ভোট নিতে প্রয়োজন মাত্র ৩২ জন। অথচ প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত সমর্থন এখনই হয়ে গেছে।কেউই আর বাধা দিয়ে আটকাতে পারবেননা এই বিল উত্থাপন এবং ভোটাভুটি ।

তবে স্পীকার, মেজরিটি লিডার ভোট না দেয়ার পক্ষে আছেন কট্টর অবস্থানে।গভর্ণর সূচনা থেকে এই দুই লিডারসহ একমত হলেও তিনি কিছুটা নমনীয় বলে শোনা যাচ্ছে।স্বার্থের শৃংখলে আবদ্ধ থাকা কট্টরপন্থী এই কজনও শেষ পর্যন্ত মধ্যপন্থি হবেন আশা করা যায়।যতই হোক, শেষ পর্যন্ত সবাই দীর্ঘকালের রাজনৈতিক সতীর্থ এবং বন্ধু। নিউইয়র্কবাসীদের মধ্যে বিভেদ বিবাদের এবং দলের ভেতরে একতার উপর ঝড়ের ঝুঁকি কি নেবেন তারা? মনেতো হয়না। এজন্যেই ধৈর্যের পরীক্ষায় আমরা সবাই।

এই বিলে প্রচলিত সিডিপ্যাপ সেবা আগের মতো অব্যাহত রাখার জন্যে রয়েছে প্রস্তাব।এই প্রস্তাবের সারকথা হচ্ছে, “সিডিপ্যাপ সেবা কার্যক্রম চলতি ধারায় রাখার মেয়াদ বৃদ্ধি করা জরুরি”। এতে সমর্থন রয়েছে মেজরিটি সিনেটরদের।আমাদের আন্দোলনও সেবাগ্রহীতা সেবাদাতাদের রক্ষার পক্ষে।

স্টেটের শীর্ষ কর্মকর্তারা বলছেন, এ স্থান্তান্তর প্রক্রিয়াটি এরই মধ্যে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে । কেননা ২ লাখ ৮০ হাজারেরও বেশি রোগী নিবন্ধন পিপিএলের মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠান দিয়ে সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। আবার এই পিপিএল শুধুমাত্র ইংরেজিতে পরিচালিত ওয়েবসাইটের কারণে ভাষাগত অসুবিধা, দীর্ঘ সময় ধরে কল অপেক্ষার সমস্যা, এবং জটিল অনলাইন নিবন্ধনের সম্মুখীন হচ্ছেন সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান ও সেবা গ্রহীতারা।

এ প্রসঙ্গে ট্রয়ের হোম কেয়ার গ্রাহক অ্যাঞ্জেলা হারমার হতাশা প্রকাশ করে বলেন, আমি এখন একটি স্বাধীন জীবনযাপন কেন্দ্রের (ইন্ডিপেন্ডেন্ট লিভিং সেন্টার) সহায়তায় প্রক্রিয়াটি শুরু করছি এবং আমার ব্যক্তিগত সহকারীকে (PA) নিবন্ধন করানোর চেষ্টা করছি। সেই কেন্দ্রটি পিপিএল-এর কাছে দুইবার কাগজের ফর্ম চেয়েছে, কিন্তু এখনও কোনো উত্তর পায়নি। মাত্র তিন সপ্তাহের মধ্যে সবাইকে নতুন এই সিস্টেমে অন্তর্ভুক্ত করা অসম্ভব।

এ অবস্থায় তিনি গভর্নর ক্যাথি হোকুলের প্রতি সময়সীমা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমাদের গভর্নরের পক্ষ থেকে সামান্য হলেও সহানুভূতি এবং হৃদয়বোধ দেখানোর প্রয়োজন। তিনি যেন শুধুমাত্র কিছু মানুষের জন্য নয়, বরং সমস্ত নিউ ইয়র্কবাসীর কথা ভাবেন।

এদিকে সিডিপ্যাপের উপর নির্ভরশীল ৭ লাখের বেশি গ্রাহক ও কর্মীর মধ্যে এখনও মাত্র এক-তৃতীয়াংশেরও কম ব্যক্তি পিপিএলের সাথে নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু বা সম্পন্ন করেছেন। এই সময়সীমা ঘনিয়ে আসায় অনেকের সেবা হারানোর আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, যা তাদের নার্সিং হোম বা জরুরি বিভাগে যেতে বাধ্য করতে পারে।

অন্যদিকে নিউ ইয়র্ক স্টেট সিনেটর গুস্তাভো রিভেরা একটি বিকল্প পরিকল্পনার অভাবের সমালোচনা করে বলেন, নির্বাহী কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই অবিলম্বে এই রূপান্তর বিলম্বিত করতে হবে, যাতে এটি নিউ ইয়র্কবাসীদের সেবা বঞ্চিত না করে বা তাদের কর্মসংস্থান ব্যাহত না হয়।

স্টেট সিনেটর র‍্যাচেল মে এই সময়সীমা পেছানোর প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়ে বলেন, আমাদের অবশ্যই এই রূপান্তরের তারিখ পিছিয়ে দিতে হবে, যাতে আইনসভা ও আমাদের সরকারি অংশীদাররা একসঙ্গে কাজ করে গ্রাহক ও কর্মীদের জন্য ন্যায্য সমাধান নিশ্চিত করতে পারে।

অ্যাসেম্বলি সদস্য সারাহানা শ্রেষ্ঠা সিডিপ্যাপের গুরুত্ব তুলে ধরে জানিয়েছেন, এটি প্রতিবন্ধী ও প্রবীণদের জন্য একটি লাইফলাইন। তিনি গভর্নরের প্রতি এই রূপান্তর বিলম্বিত করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, বর্তমানে নির্ধারিত সময়সীমা একটি অসম্ভব কাজ তৈরি করছে।

অন্যদিকে, এই রূপান্তর স্বাস্থ্য বীমা সংস্থাগুলোর কাছ থেকেও সমালোচনার মুখে পড়েছে। তারা সতর্ক করেছে যে, গভর্নর হোকুলের প্রতিশ্রুত ৫০০ মিলিয়ন ডলার সঞ্চয়ের পরিবর্তে এই পরিকল্পনা স্টেটের জন্য আরও ব্যয়বহুল হতে পারে।

বীমা সংস্থাগুলো পিপিএলের আগাম অর্থপ্রদানের দাবির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, কারণ এটির জন্য সুস্পষ্ট ক্ষতিপূরণ নীতিমালা নেই।

অন্য কয়েকটি রাজ্যে, পিপিএলের বিরুদ্ধে নিম্নমানের গ্রাহক সেবা, তহবিল ব্যবস্থাপনায় গাফিলতি এবং শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে, যার ফলে তারা একাধিক জায়গায় চুক্তি হারিয়েছে।

এদিকে, ১ এপ্রিলের সময়সীমা ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে বিলম্বের দাবি আরও জোরালো হচ্ছে।

আরও পড়ুন

আরও সংবাদ