জেবি টিভি রিপোর্ট : দফায় দফায় আন্দোলন, প্রস্তাবনা এমনকি মামলা । শেষমেষ আদালতের রায় নিউইয়র্ক স্টেটের জনপ্রিয় হোমকেয়ার সেবায় সিডিপ্যাপ এজেন্সি গুলোর পক্ষে এসেছে। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বর্তমান সেবা গ্রহীতাদের আগামী ১৫ মে পর্যন্ত তাদের কেস পিপিএলে স্থানান্তরের বিষয়ে স্থগিতাদেশ ( ইনজাংশন) এসেছে । একই সাথে ব্যক্তিগত সেবাদানকারীরা ৬ জুন পর্যন্ত সময় পাচ্ছেন অনবোর্ডিং সম্পন্ন করার জন্য।
বৃহস্পতিবার , নিউ ইয়র্কের ব্রুকলিনের ফেডারেল জজ ফেডরিক ব্লক চলমান সিডিপ্যাপ ইস্যুতে দুই পক্ষের সম্মতিতে একটি প্রাথমিক নিষেধাজ্ঞায় স্বাক্ষর করেছেন।
যেখানে বলা হয়েছে, সিডিপ্যাপ এজেন্সির আওতায় থাকা সেবা গ্রহীতারা ১৫ মে পর্যন্ত পিপিএলে রেজিস্ট্রেশন করার সুযোগ এবং আগের যেখান থেকে সিডিপ্যাপ সেবা নিয়ে আসছিলেন সেবাগ্রহীতারা সেখান থেকে এই সেবা কার্যক্রম চলমান রাখতে পারবেন। একই ভাবে যারা সেবাদান করছেন সেসব পার্সোনাল অ্যাসিসটেন্ট বা পিএ তাদের ক্ষেত্রে এ সময় সীমা ৬ জুন পর্যন্ত । তবে ফেডারেল বিচারক তার রায়ে পিপিএলে কার্যক্রম এবং সেবা গ্রহীতাদের সন্তুষ্টির বিষয়ে ডিপার্টমেন্ট অব হেলথকে নজরদারি বাড়াতে বলেছেন।
আদালতের এমন সিদ্ধান্তে বিশ্লেষকরা বলছেন, স্থগিতাদেশের এই মেয়াদ আরোও বাড়তে পারে । একই সাথে সিডিপ্যাপ হোমকেয়ার এজেন্সীগুলোর পক্ষে রায় বহাল থাকবে।
তারা বলছেন, নিউইয়র্কে হোমকেয়ার সেবায় নিয়োজিত সিডিপ্যাপ কর্মসূচির আওতায় সেবাগ্রহীতারা চেষ্টা করেও ৩০ এপ্রিলের ভেতরে নিবন্ধন করতে ব্যর্থ হবে পাবলিক পার্টনারশিপ এলএলসি (পিপিএল) । এরই মধ্যে হাজার হাজার সেবা গ্রহীতা ও সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ৩০ এপ্রিলের স্থানান্তরের সময়সীমার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছে।
এ অবস্থায়, সার্বিক দিক বিবেচনায় নিয়ে তুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বর্তমান সেবা গ্রহীতাদের আগামী ১৫ মে পর্যন্ত তাদের কেস পিপিএলে স্থানান্তরের বিষয়ে স্থগিতাদেশ ( ইনজাংশন ) এসেছে । একই সাথে ব্যক্তিগত সেবাদানকারীরা ৬ জুন পর্যন্ত সময় পাচ্ছেন অনবোর্ডিং সম্পন্ন করার জন্য।
এ প্রসঙ্গে নিউইয়র্কে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, এ রায়ের মধ্য দিয়ে আপাতত হোম কেয়ার সেবা বিষয়ক জটিলতার সমাধান হয়েছে। তারা বলছেন, আদালত একটি ৯ বিলিয়ন ডলারের হোম কেয়ার কর্মসূচি সংস্কারের সময়সীমা বাড়াতে সম্মত হয়েছেন । যদিও তারা মাসের পর মাস দাবি করে আসছিলেন যে পরিবর্তন প্রক্রিয়া নির্বিঘ্নে চলছে এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সম্পন্ন হবে।
আইনজীবীরা জানান, নিউ ইয়র্কের হেলথ ডিপার্টমেন্টের সিদ্ধান্ত অনুসারে একক প্রতিষ্ঠান হিসেবে সিডিপ্যাপ সেবা পরিচালনার দায়িত্ব পায় পিপিএল। তাদের সাথে টানাপড়েন শুরু হয় সিডিপ্যাপের সেবা দেয়া প্রায় ৬শ এজেন্সির। ফলে বিপাকে পড়েন প্রায় ২ লাখ ৮০ হাজার সেবা গ্রহীতা ও তাদের পরিবার। স্টেটের সিডিপ্যাপ সেবা থেকে পিপিএলে স্থানান্তরের এই প্রক্রিয়ার এই এক রোখা পরিকল্পনাটি আপাতত স্থগিত না হলে বহু সেবাদাতা ও সেবা গ্রহীতার সেবা ব্যাহত হতে পারে।
পিপিএলের দাবি , ভোক্তাদের নিবন্ধন প্রক্রিয়াটি মাত্র ২০ মিনিটেই সম্পন্ন করা যায়। একই সাথে স্থানান্তরের এই প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত সহজ । সেবাগ্রহীতা এবং সেবাকর্মীদের মতে, এই বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয় । তারা বলছেন, সেবাগ্রহীতারা ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো সমস্যা সৃষ্টি করে না বা প্রক্রিয়া বিলম্বিত করে না। বরং পিপিএল ব্যবস্থাপনার অক্ষমতা এ জন্য দায়ী ।
এদিকে, কেয়ার ভোক্তা ও কেয়ারগিভারদের অধিকারকর্মীরা জানিয়েছে, পিপিএলে নিবন্ধন প্রক্রিয়া নিউইয়র্ক স্টেট যে রকম সহজ বলে প্রচার করছিল, বাস্তবে তা অনেক বেশি জটিল ও বিভ্রান্তিকর। অনেকেই এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হিমশিম খাচ্ছেন। কেউ কেউ উদ্বিগ্ন যে, তারা সময়মতো বেতন না পেলে তাদের কেয়ারগিভাররা চলে যেতে পারেন। এছাড়া পিপিএলের যথেষ্ট কর্মী নেই, ফোনে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না, তাদের ওয়েবসাইট ক্র্যাশ করছে। চেষ্টা করে সময়ের মধ্যে স্থানান্তর সম্পন্ন করা সম্ভব হচ্ছে না ।
৯ এপ্রিল পর্যন্ত, প্রায় ৩২ হাজার হোম কেয়ার সেবা গ্রহিতারা এখনো পিপিএলে নিবন্ধন সম্পন্ন করেননি এবং প্রায় ৩৬ হাজার কর্মী এখনো কোম্পানির মাধ্যমে তাদের কর্মঘণ্টা রেকর্ড করতে পারছেন না বলে দাবি স্বাস্থ্য বিভাগের। যদিও এ সংখ্যাটা আরোও বেশি বলে মনে করছেন হোমকেয়ার সংশ্লিষ্ট এজেন্সিগুলো ।
উল্লেখ্য, গত ২৬ মার্চ নিউইয়র্ক লিগ্যাল অ্যাসিটেন্স গ্রুপ নামে একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হোম কেয়ার ভোক্তাদের পক্ষে স্টেটের স্বাস্থ্য বিভাগের বিরুদ্ধে মামলা করে পরিবর্তন পরিকল্পনার সময়সীমা বাড়ানোর জন্য। বিচারক স্টেটকে নতুন একটি ট্রানজিশন পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনার নির্দেশ দেন, যার ফলে চুক্তিটি হয়।
চুক্তি অনুযায়ী, যে-সব ব্যক্তিগত সহকারীরা এখনো পিপিএলের মাধ্যমে বেতন পাওয়ার জন্য প্রস্তুত নন, তারা হয় দ্রুততর এক অনবোর্ডিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যুক্ত হতে পারবেন, অথবা তারা যে-সব কোম্পানির সঙ্গে আগে কাজ করতেন সেখান থেকেই বেতন পেতে পারবেন।
এদিকে, প্রথম থেকেই অধিকারকর্মীরা বলেছিলেন, মাত্র তিন মাসে এত বড় একটি কর্মসূচির নিয়ন্ত্রণ পিপিএলকে দেওয়া সম্ভব নয়। সমালোচকরা এবং কর্মসূচি থেকে বাদ পড়তে চলা কোম্পানিগুলিও বলেছে, স্টেট পিপিএলকে নির্বাচন করে ভুল করেছে।