Saturday, February 8, 2025

ট্রাম্পের সহায়তা বন্ধের ঘোষণায় কোন দেশ সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে

Share

জেবিটিভি রিপোর্ট: মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে গত ২০ জানুয়ারি শপথ নেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। শপথ নেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ট্রাম্প শতাধিক নির্বাহী আদেশে সই করে একপ্রকার ঝড় তুলেন। সেইদিনেই ট্রাম্প বিদেশি সহায়তা কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত করার নির্দেশ দেন।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ (যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ সবার আগে) নীতি কার্যকর করার অংশ হিসেবে ট্রাম্প এ উদ্যোগ নেন।

আপাতত তিন মাসের জন্য এই স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত হয়েছে বিবিসি। সহায়তার আওতায় থাকা প্রকল্পগুলো বর্তমান মার্কিন প্রশাসনের নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা তা এই সময়ের মধ্যে পর্যালোচনা করে দেখা হবে।

ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের কারণে ইতোমধ্যেই মার্কিন অর্থায়নে চলমান প্রকল্পের কাজ বন্ধ বা স্থগিত করা হয়েছে, কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মীদের হোম অফিস করার নির্দেশ দিয়েছে বলে জানা গেছে।

বিশ্বজুড়ে বৈদেশিক সহায়তায় পরিমাণের দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের অবদান সর্বোচ্চ। ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক সাহায্যের জন্য দেশটি ৬৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ করেছে।

২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সবথেকে বেশি সহায়তা পেয়েছে রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত ইউক্রেন।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে ইউক্রেন যুক্তরাষ্ট্র থেকে মোট ১ হাজার ৬৬২ কোটি ডলার পেয়েছে। এর মধ্যে অর্থনৈতিক সহায়তা ১ হাজার ৬৪৮ কোটি ডলার ও সামরিক সহায়তা ১৪ কোটি ডলার।

এরপরেই দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ইসরায়েল। দেশটি মোট ৩৩১ কোটি ডলার সহায়তা পেয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ১ কোটি অর্থনৈতিক সহায়তা বাদে পুরোটাই সামরিক সহায়তা।

তৃতীয় অবস্থানে থাকা ইথিওপিয়া ১৭৭ কোটি ডলার অর্থনৈতিক সহায়তা পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। জর্ডানকে ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র মোট ১৭২ কোটি ডলার দিয়েছে। এর মধ্যে ১২৯ কোটি ডলার অর্থনৈতিক সহায়তা ও সামরিক সহায়তা ৪৩ কোটি ডলার।

পঞ্চম অবস্থানে থাকা মিশর সবমিলিয়ে পেয়েছে ১৪৫ কোটি ডলার। এর মধ্যে অর্থনৈতিক সহায়তা ২২ কোটি ডলার ও সামরিক সহায়তা পেয়েছে ১২২ কোটি ডলার।

একই বছর যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানকে অর্থনৈতিক সহায়তা দিয়েছে ১২৭ কোটি ডলার। সোমালিয়াকে অর্থনৈতিক সহায়তা হিসেবে ১০৮ কোটি ডলার ও সামরিক সহায়তা হিসেবে ১৩ কোটি ডলার। ইয়েমেন অর্থনৈতিক সহায়তা পেয়েছে ৮৩ কোটি ডলার।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে জানা যায়, ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশি সহায়তার তালিকার ২০ নম্বরে রয়েছে বাংলাদেশ। ওই বছর দেশটি বাংলাদেশকে দিয়েছে ৫৫ কোটি ডলার। এর মধ্যে ৫১ কোটি ডলার অর্থনৈতিক সহায়তা আর ৪ কোটি ডলার দিয়েছে সামরিক সহায়তা হিসেবে।

এসব অর্থ ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টসহ (ইউএসএআইডি) বিভিন্ন বৈশ্বিক কর্মসূচি থেকে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ইউএসএআইডির মাধ্যমে ৪ হাজার ২৪৫ কোটি ডলার দেওয়া হয়েছে। স্টেট ডিপার্টমেন্ট দিয়েছে ১ হাজার ৯০০ কোটি ডলার ও মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ দিয়েছে ২১৭ কোটি ডলার।

খাতওয়ারী বেশি দিয়েছে অর্থনৈতিক উন্নয়নে, ১ হাজার ৯০০ কোটি ডলার। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যসেবায় দেওয়া হয়েছে ১ হাজার ৬০০ কোটি ডলার। মানবিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে ১ হাজার ৫৬০ কোটি ডলার।

২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র ৮২০ কোটি ডলার সামরিক সহায়তা দিয়েছে বিভিন্ন দেশকে, যার অর্ধেকই পেয়েছে ইসরায়েল ও মিশর।

আল জাজিরা বলছে, সহায়তা বন্ধের ঘোষণায় যুক্তরাষ্ট্রের ‘প্রেসিডেন্ট’স ইমারজেন্সি প্ল্যান ফর এইডস রিলিফ’ (পিইপিএফএআর) কর্মসূচিতে প্রভাব পড়তে পারে। ২০০৩ সালে প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের হাত ধরে বিশ্বের সবথেকে বড় এই স্বাস্থ্য কর্মসূচি চালুর পর থেকে এটি ১২ হাজার কোটি ডলার গ্রহণ করেছে সরকারের কাছ থেকে।

পিইপিএফএআর মনে করে বিশ্বজুড়ে ৫০টি দেশে তারা আড়াই কোটি মানুষের জীবন বাঁচিয়েছে, যার মধ্যে ৫০ লাখের বেশি শিশু। এই কর্মসূচিতেও সহায়তা স্থগিতের সমালোচনা করে ‘ফাউন্ডেশন ফর এইডস রিসার্চ’ বলছে, এর ফলে লাখো মানুষ তাৎক্ষণিকভাবে এইচআইভি চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হবে।

ঘানা, মোজাম্বিক ও দক্ষিণ আফ্রিকায় এইচআইভি ও যক্ষ্মা নিয়ে কাজ করা ‘অলাভজনক’ অরাম ইনস্টিটিউট কার্যক্রম বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। অরাম ইনস্টিটিউটও যুক্তরাষ্ট্র থেকে তহবিল নিয়ে কাজ করে।

সহায়তা বন্ধের ধাক্কা পড়েছে বাংলাদেশেও। তবে রোহিঙ্গাদের জন্য জরুরি খাদ্য সহায়তা ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবে বলে তথ্য দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।

এরইমধ্যে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়ন পরিচালিত প্রকল্পে কাজ করা সহস্রাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ক্রমান্বয়ে ছাঁটাই করার কথা জানানো হয়েছে।

আরও পড়ুন

আরও সংবাদ