joybangladesh.tv
Friday, May 30, 2025

ট্রাম্পের শুল্ক আরোপে চীন-জাপান-যুক্তরাজ্যসহ দেশে দেশে প্রতিক্রিয়া !

Share

জেবি টিভি রিপোর্ট : ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষিত “মুক্তির দিন” মূলত ১লা এপ্রিলের জন্য নির্ধারিত ছিল । তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট সাংবাদিকদের বলেছেন , তিনি এটি ২৪ ঘণ্টা পিছিয়ে দিয়েছেন যাতে এটি এপ্রিল ফুলের রসিকতা হিসাবে দেখা না হয়। “কেউই আমার কথা বিশ্বাস করত না, ২১শে মার্চ দেরির কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন এমনটা বলেন ট্রাম্প।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য আমদানির ওপর উচ্চ হারে শুল্ক আরোপের যে ঘোষণা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দিয়েছেন, তার বিরোধিতায় সোচ্চার হয়েছে চীন, জাপান, যুক্তরাজ্যসহ আরও অনেক দেশ। ট্রাম্পের এ ঘোষণায় দেশগুলোর দেওয়া তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তাদের ব্যাপকভাবে ক্ষুব্ধ হওয়ার বিষয়টি উঠে এসেছে। কিছু দেশ এরই মধ্যে দ্রুত পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে, যা অর্থনীতিকে আরও বিচ্ছিন্ন করে তুলতে পারে, অন্যরা আলোচনার মাধ্যমে সংকট এড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে।

ট্রাম্পের নতুন করে এ শুল্ক আরোপ করাকে ‘বাণিজ্যযুদ্ধ’ হিসেবে আখ্যায়িত করছে অনেক দেশ। ওয়াশিংটনের বুধবার হোয়াইট হাউসে সংবাদ সম্মেলন করে এ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন তিনি।

অস্ট্রেলিয়া

প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজ মেলবোর্নে এরই মধ্যে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন ট্রাম্পের শুল্ক “যুক্তিহীন” এবং এটি অস্ট্রেলিয়া-মার্কিন কূটনৈতিক সম্পর্কের ভিত্তির পরিপন্থী। তিনি আরও বলেন, এটি বন্ধুর আচরণ নয়, তবে অস্ট্রেলিয়া মার্কিন পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করছে না।

ব্রাজিল
ব্রাজিল, যাকে ১০% শুল্কের আওতায় আনা হয়েছে, ইতোমধ্যে একটি প্রতিশোধমূলক বিল পাস করেছে, যা মার্কিন পণ্যের উপর পাল্টা শুল্ক আরোপের অনুমতি দেয়। প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় ট্রাম্পের শুল্ক নীতি চ্যালেঞ্জ করার কথাও বিবেচনা করছেন।

চীন

বেইজিং বলেছে, তাদের রপ্তানি পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নতুন করে শুল্ক আরোপকে ‘জোরালোভাবে প্রত্যাখ্যান’ করছে তারা। সেই সঙ্গে নিজের অধিকার ও স্বার্থ রক্ষায় পাল্টা পদক্ষেপ নেওয়ার অঙ্গীকার করছে।

চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের নিয়মনীতির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয় এবং এটি সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর বৈধ অধিকার ও স্বার্থ ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

কানাডা

কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি হুঁশিয়ার করে বলেছেন, এ শুল্ক আরোপ বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থাকে মৌলিকভাবে বদলে দেবে।

মার্ক কার্নি আরও বলেন, ‘আমরা পাল্টা পদক্ষেপ নিয়ে এ শুল্ক মোকাবিলা করতে যাচ্ছি। আমরা আমাদের কর্মীদের সুরক্ষা দিতে চলেছি।’

ইউরোপীয় ইউনিয়ন

ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেইন বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এরইমধ্যে মার্কিন শুল্কের প্রতিক্রিয়ায় পাল্টা ব্যবস্থা প্রস্তুত করছে। তিনি বলেন, এই সিদ্ধান্ত বিশ্ব অর্থনীতির জন্য বড় ধরনের আঘাত। এটি অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করবে এবং আরও সুরক্ষাবাদী নীতি গ্রহণের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলবে।”

জার্মানি

দ্য জার্মান অটোমোটিভ ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন (ভিডিএ) বলেছে, এই শুল্ক ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সংখ্যাই শুধু বাড়াবে।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এখন নিজেদের একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানাচ্ছে উল্লেখ করে ভিডিএ আরও বলেছে, এ জোট সমঝোতায় আগ্রহের ইঙ্গিতও দিয়ে যাচ্ছে।

জার্মান কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রির সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র। প্রতিষ্ঠানটি ইইউকে ‘মাথা ঠান্ডা’ রাখার অনুরোধ জানিয়ে বলেছে, ‘উত্তেজনা শুধু ক্ষতিই বাড়াবে।’

সুইজারল্যান্ড

সুইজারল্যান্ডের ওপর ৩১ শতাংশ শুল্ক আরোপের পর দেশটির প্রেসিডেন্ট কারিন কেলার–সাটার বলেছেন, সামনে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে, সরকার শিগগিরই সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।

সুইস প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, ‘দেশের দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক স্বার্থ অগ্রাধিকারমূলক বিষয়। আন্তর্জাতিক আইন ও অবাধ বাণিজ্যের প্রতি শ্রদ্ধা দেখানোও মৌলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ।’

থাইল্যান্ড

থাই প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা বলেছেন, ট্রাম্পের ৩৬ শতাংশ শুল্ক আরোপ কীভাবে মোকাবিলা করা হবে, সে ব্যাপারে ‘শক্ত পরিকল্পনা’ তাঁর সরকারের রয়েছে। পেতংতার্নের আশা, সমঝোতার মাধ্যমে এ হার কমানো সম্ভব হবে। নতুন শুল্ক আরোপের প্রভাব কমাতে তাঁর সরকার পদক্ষেপ নেবে বলেও জানান তিনি।

ডেনমার্ক

ডেনমার্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লার্স লোক্কে রাসমুসেন বলেছেন, ট্রাম্পের নতুন পদক্ষেপ বৈশ্বিক সমৃদ্ধিকে হুমকিতে ফেলেছে।

রাসমুসেন আরও বলেন, ‘বিশ্ব বাণিজ্য আমাদের অধিকতর ভালো একটি অবস্থানে নিয়ে এসেছে। চলতি প্রজন্মে বিশ্ব আরও সম্পদশালী হয়েছে, চরম দারিদ্র্য হ্রাস পেয়েছে, শিশুমৃত্যুর হার কমেছে এবং আমরা সবাই আরও দীর্ঘজীবী হয়েছি।’ ‘অনাকাঙ্ক্ষিত বাণিজ্যযুদ্ধে ইউরোপের সবকিছু বিপন্ন হতে দেখে (আমি) দুঃখিত’, বলেন রাসমুসেন।

ভারত
ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখবে। ভারত, যাকে ২৬% শুল্কের আওতায় আনা হয়েছে, তুলনামূলকভাবে কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিস্টিটিউ জানিয়েছে।

জাপান
জাপানের বাণিজ্য মন্ত্রী ইয়োজি মুতো মার্কিন বাণিজ্য সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন এবং জাপানকে শুল্কের বাইরে রাখার অনুরোধ করেছেন। তবে ট্রাম্প প্রশাসন সেই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছে। মুতো বলেন, “আমরা এই সিদ্ধান্তকে অত্যন্ত দুঃখজনক মনে করছি।”

যুক্তরাজ্য
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টার্মার বলেছেন, যুক্তরাজ্য শান্ত ও স্থিতিশীলভাবে এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করবে। যুক্তরাজ্যের শিল্পমন্ত্রী জনাথন রেনল্ডস বলেছেন, তারা মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে শুল্ক কমানোর চেষ্টা করবেন।

ফ্রান্স
ফরাসি সরকার ট্রাম্পের শুল্ক নীতির সমালোচনা করেছে। সরকারী মুখপাত্র সোফি প্রিমাস বলেছেন, “ট্রাম্প এমন আচরণ করছেন যেন তিনি বিশ্ব শাসক।”

দক্ষিণ কোরিয়া
দক্ষিণ কোরিয়ার ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হান ডাক-সু বলেছেন, “বৈশ্বিক বাণিজ্য যুদ্ধ এখন বাস্তবতা।” কোরিয়ান শিল্পমন্ত্রী মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

ইউক্রেন

ইউক্রেনের অর্থনীতি মন্ত্রী বলেছেন, নতুন ১০% শুল্ক জটিল, কিন্তু সংকটপূর্ণ নয়।

কলম্বিয়া

কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো বলেছেন, উচ্চ হারে শুল্ক বসিয়ে ট্রাম্প ভুল পদক্ষেপ নিয়েছেন।

পেত্রো বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র সরকার এখন ধারণা করছে, তার আমদানি করা পণ্যের ওপর ঢালাওভাবে শুল্ক আরোপ করে নিজেদের উৎপাদন, সম্পদ ও কর্মসংস্থান বাড়াতে পারবে। আমার মতে, এটা বড় ভুল হতে পারে।’

বিশ্লেষকরা বলছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্কনীতি বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থাকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। বেশিরভাগ দেশ আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান চাইলেও কিছু দেশ পাল্টা ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত। তবে একাধিক বিশ্ব নেতা সতর্ক করেছেন যে এই শুল্ক যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।

আরও পড়ুন

আরও সংবাদ