জেবি টিভি রিপোর্ট : জন্মসূত্রে মার্কিন নাগরিকত্ব বাতিলের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ শুরুতেই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। একজন ফেডারেল বিচারক নির্বাহী আদেশটি অস্থায়ীভাবে স্থগিত করেছেন। অস্থায়ী স্থগিতাদেশে স্বাক্ষর করেছেন সিয়াটলের ফেডারেল বিচারক জন কফেনার। চারটি ডেমোক্র্যাট নিয়ন্ত্রিত স্টেট অ্যাটর্নির করা আবেদনের শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন এই ডিস্ট্রিক্ট জাজ।
৪৭তম প্রেসিডেন্টের দায়িত্বভার নিয়ে ট্রাম্প প্রথম যে পদক্ষেপগুলো নিয়েছেন, তার একটি হচ্ছে- জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব সুবিধা বাতিলের লক্ষ্যে নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর। এই ‘জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের’ অর্থ হচ্ছে, যে-ই দেশটিতে জন্মাবে, সে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হয়ে যাবে। এই নীতি বদলাবেন বলে অনেক দিন ধরেই ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছিলেন, ক্ষমতায় বসে সে লক্ষ্যে পদক্ষেপও নিলেন, কিন্তু এটিকে বাস্তবায়ন করা তার পক্ষে মোটেই সহজ হবে না। সিয়াটলের ফেডারেল বিচারকের আদেশ তাই ইঙ্গিত দিচ্ছে। আমেরিকায় অবৈধভাবে কিংবা ক্ষণস্থায়ী ভিসায় থাকা
অভিবাসীদের কোনো সন্তান জন্ম নিলে তারা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পাবে, এই নীতির পরিবর্তন চাওয়া হয়েছে ট্রাম্পের সোমবারের আদেশে। তবে এটি ট্রাম্পের স্বাক্ষরের আগের সময় থেকে কার্যকর হবে, এমন কোনো ইঙ্গিত নথিতে মেলেনি।
তিনি কীভাবে জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের এই সুবিধা প্রত্যাহার করে নেবেন তাও স্পষ্ট নয়। কেননা, নাগরিকত্বের এই অধিকার মার্কিন সংবিধানে লিপিবদ্ধ, আর তা বদলাতে হাউজ এবং সেনেটের দুই চ্যাম্বারেই দুই-তৃতীয়াংশ আইনপ্রণেতারে সমর্থন লাগবে। ট্রাম্পের এই আদেশকে তুমুল আইনি প্রতিরোধও মোকাবেলা করতে হবে। ডেমোক্র্যাট নেতৃত্বাধীন ২২টি স্টেট এবং সান ফ্রান্সিসকো সিটি ও ডিস্ট্রিক্ট অব কলাম্বিয়া এরই মধ্যে এ আদেশের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে ফেডারেল সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করে দিয়েছে। সংবিধানের চতুর্দশ সংশোধনীর প্রথম বাক্যে ‘জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের অধিকার’ নীতিটি বলবৎ হয়েছে।
সেখানে বলা হয়েছে, “যুক্তরাষ্ট্র এবং এর আওতাধীন এলাকায় জন্ম নেওয়া বা আত্মীকৃত সব মানুষ যুক্তরাষ্ট্র এবং তারা যেই রাজ্যে বাস করে সেখানকার নাগরিক।” এই নীতি অবৈধ অভিবাসীদের জন্য ‘বড় চুম্বক’ এবং এটি নথিপত্রহীন গর্ভবতী নারীদের সীমান্ত অতিক্রম করে যুক্তরাষ্ট্রে এসে সন্তান জন্মদানে উৎসাহিত করে বলে ভাষ্য কট্টর অভিবাসনবিরোধীদের। তারা টিটকারি করে একে ‘বার্থ ট্যুরিজম’ বা ‘অ্যাংকর বেবি’ নেওয়ার প্রক্রিয়া হিসেবেও অ্যাখ্যা দেয়। এই নীতি বাতিলের নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করে ট্রাম্প এমন কিছু করতে যাচ্ছেন, যা অসংখ্য মানুষের মন ভেঙে দেবে। যদিও শেষ পর্যন্ত এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে আদালত। তিনি নিজে সিদ্ধান্ত নিয়ে করে ফেলতে পারবেন না, এটা এমন একটা বিষয়, বলেছেন মার্কিন সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও ভার্জিনিয়া ইউনিভার্সিটির ল’ স্কুলের অধ্যাপক সাইকৃষ্ণ প্রকাশ।
প্রেসিডেন্ট চাইলে যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের মতো সংস্থার কর্মকর্তাদের নাগরিকত্বকে আরও সংকীর্ণভাবে দেখার কথা বলতে পারেন, কিন্তু কারো নাগরিকত্ব বাতিল হলে তিনি তো সঙ্গে সঙ্গেই আদালতের দ্বারস্থ হবেন। আর এ লড়াই এত লম্বা হবে যে শেষ পর্যন্ত তা মার্কিন সুপ্রিম কোর্টেই যাবে, বলছেন প্রকাশ।