জেবি টিভি রিপোর্ট: ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ প্ল্যান্টগুলোতে ছয় হাজারেরও বেশি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ সেন্ট্রিফিউজ বসানোর পরিকল্পনা করছে ইরান। ইতিমধ্যে যেসব সেন্ট্রিফিউজ রয়েছে সেগুলোও পুনরায় সংযুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। ইরান জাতিসংঘের পরমাণু পর্যবেক্ষণ সংস্থাকে এ কথা জানিয়েছে।
আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) গোপনীয় এক প্রতিবেদনের বরাতে রয়টার্স এ তথ্য জানিয়েছে।
এর আগে ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধে সম্প্রতি ইরানের বিরুদ্ধে পাস হওয়া একটি প্রস্তাবের জবাবে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বাড়ানোর ঘোষণা দেয় দেশটি।
উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানোর মানে হলো ইরান আরও দ্রুত সময়ের মধ্যে নিজেদের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে পারবে।
ইরান পরমাণু অস্ত্র বানাবে না বললেও পশ্চিমা শক্তিগুলো বলছে, ইতিমধ্যে তারা ৬০ শতাংশ পর্যন্ত বিশুদ্ধতায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করেছে কোনো ব্যাখ্যা তারা পায়নি, যা প্রায় ৯০ শতাংশের কাছাকাছি। পারমাণবিক বোমা তৈরি করা ছাড়া কোনো দেশ এ মানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করে না।
নতুন সেন্ট্রিফিউজের ক্ষেত্রে ইরান ৫ শতাংশ পরিশুদ্ধতার কথা বলেছে, যা ৬০ শতাংশ থেকে অনেক কম। বিশুদ্ধতা কম হওয়ার (বিশেষ করে ফরডো কেন্দ্রে) বিষয়টিকে ইরানের সমঝোতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা যেতে পারে। কারণ, মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব গ্রহণের আগেই ইউরোপীয় শক্তিধর দেশগুলোর সঙ্গে মতৈক্যের জায়গাগুলো খুঁজে বের করতে চাইছে ইরান। যদিও পরবর্তী সময় সহজেই ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের মাত্রা পরিবর্তন করতে পারবে দেশটি।
ইরানের নাতাঞ্জ ও ফোরদোতে দুটি ভূগর্ভস্থ প্ল্যান্ট এবং নাতাঞ্জে মাটির উপরে একটি পাইলট প্ল্যান্টে ১০ হাজারেরও বেশি সেন্ট্রিফিউজ রয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, নতুন করে ১৬০টিরও বেশি মেশিনের আরও ৩২টি ক্যাসকেড বা ক্লাস্টার এবং ১ হাজার ১৫২টি উন্নত আইআর-৬ মেশিনের বিশাল ক্যাসকেড স্থাপনের পরিকল্পনার রূপরেখা দেওয়া হয়েছে।
গত সপ্তাহে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার বোর্ড অব গভর্নরসের বৈঠকের আগে ইরান প্রস্তাব দিয়েছিল তারা ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের মাত্রা ৬০ শতাংশের মধ্যে সীমিত রাখবে। তবে এ জন্য বোর্ড অব গভর্নরসকে শর্ত দিয়েছিল ইরান। দেশটির বিরুদ্ধে প্রস্তাব পাস না করার শর্ত ছিল।
এদিকে, সম্প্রতি ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের টেলিগ্রাম চ্যানেলে পোস্ট করা বিবৃতিতে বলে, ইরানের পরমাণু শক্তি সংস্থার প্রধান বিভিন্ন ধরনের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নতুন উন্নত সেন্ট্রিফিউজ স্থাপনসহ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। দেশের ক্রমবর্ধমান চাহিদা অনুসারে ‘জাতীয় স্বার্থ রক্ষা এবং শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক শিল্পকে আরও বিকাশের জন্য’ প্রতিশোধমূলক আরও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার সঙ্গে কারিগরি ও সুরক্ষা সহযোগিতা অতীতের মতো অব্যাহত থাকবে। যেমনটি উভয়ের সম্মতিতে হয়েছিল। আন্তর্জাতিক আইনি নীতি ও মানদণ্ডের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে গঠনমূলক সম্পৃক্ততার জন্য তেহরান ভালোভাবে প্রস্তুতও রয়েছে। মহান ইরানি জাতির অধিকার ও স্বার্থ রক্ষা এবং শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পরমাণু কর্মসূচি গড়ে তোলার নীতি অনুসরণে ইরান অবিচল রয়েছে।