joybangladesh.tv
Wednesday, May 28, 2025

চীনাদের সাথে মার্কিন কূটনৈতিকদের প্রেম , যৌন সর্ম্পক নিষিদ্ধ ঘোষণা ট্রাম্প প্রশাসনের !

Share

কাবেরী মৈত্রেয় : যুক্তরাষ্ট্র-চীন এ যেন সাপে নেউলে দ্বি-পাক্ষিক সর্ম্পক হয়ে উঠছে দিনকে দিন। অর্থনৈতিক- বাণিজ্যিক-রাজনৈতিক এমনকি ভৌগলিকভাবে আধিপত্য বিস্তারে বিশ্বে এই দুই পরাশক্তি এগিয়ে । ক্রোধ-বিদ্বেষ এতোটায় বেড়েছে যে এবার ট্রাম্প প্রশাসন চীনে অবস্থানরত মার্কিন সরকারি কর্মী, তাদের পরিবারের সদস্য এবং নিরাপত্তা ছাড়পত্রপ্রাপ্ত ঠিকাদারদের চীনা নাগরিকদের সঙ্গে যেকোনো ধরনের প্রেম বা যৌন সম্পর্ক থেকে নিষিদ্ধ করেছে । এমনটা জানিয়েছে এপি ।

সূত্র বলছে, গত জানুয়ারীতে সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিকোলাস বার্নস চীন ছাড়ার আগে এই নীতি কার্যকর করেন। এবং এটি একটি গোপন নির্দেশনা আকারে দেয়া হয় ।

বেশ কিছু মার্কিন সংস্থা ইতোমধ্যেই এ ধরনের সম্পর্কের ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল, তবে শীতল যুদ্ধের পর থেকে এমন একটি সর্বাত্মক “নন-ফ্রাটারনাইজেশন” (সম্পর্ক স্থাপনে নিষেধাজ্ঞা) নীতি প্রকাশ্যে শোনা যায়নি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মার্কিন কূটনীতিকরা স্থানীয়দের সঙ্গে ডেটিং বা বিয়েও করে থাকেন, যা সাধারণ ব্যাপার।

এদিকে গত সামারে যুক্তরাষ্ট্র একটি সীমিত নীতি চালু করেছিল, যেখানে মার্কিন কর্মীদের চীনের মার্কিন দূতাবাস ও পাঁচটি কনস্যুলেটে নিয়োজিত চীনা কর্মীদের সঙ্গে রোমান্টিক বা যৌন সম্পর্ক নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। তবে বিদায়ী রাষ্ট্রদূত বার্নস জানুয়ারিতে এই নিষেধাজ্ঞা আরও বাড়িয়ে সেটিকে সব চীনা নাগরিকের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য করেন, যা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দায়িত্ব গ্রহণের মাত্র কয়েক দিন আগে কার্যকর হয়।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে কীভাবে এই নীতিটি প্রভাব ফেলবে ?

এই নীতির আওতায় চীনের মূল ভূখণ্ডে অবস্থিত মার্কিন কূটনৈতিক মিশনগুলো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যেমন বেইজিংয়ে মার্কিন দূতাবাস এবং গুয়াংজু, সাংহাই, শেনইয়াং ও উহানে কনস্যুলেটগুলোর পাশাপাশি হংকংয়ের মার্কিন কনস্যুলেটও। তবে এটি চীনের বাইরে অবস্থানরত মার্কিন কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।

শুধুমাত্র যেসব মার্কিন কর্মকর্তা আগে থেকেই চীনা নাগরিকদের সঙ্গে সম্পর্কে ছিলেন, তারা এই নিষেধাজ্ঞা থেকে ছাড় পাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন। যদি তাদের আবেদন নাকচ হয়, তবে তাদের হয় সম্পর্ক শেষ করতে হবে, নতুবা চাকরি ছাড়তে হবে। এই নীতি লঙ্ঘন করলে সংশ্লিষ্ট কর্মীকে অবিলম্বে চীন ছাড়তে হবে।

এই নীতি জানুয়ারিতে মৌখিক ও ইলেকট্রনিক উভয় উপায়ে মার্কিন কর্মকর্তাদের জানানো হয়, তবে এটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়নি।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি, এবং জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলও বিষয়টি পররাষ্ট্র দপ্তরের উপর ছেড়ে দিয়েছে। সাবেক রাষ্ট্রদূত বার্নসও কোনো মন্তব্য করেননি।

এদিকে, বিশ্বজুড়ে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো আকর্ষণীয় নারী-পুরুষ ব্যবহার করে স্পর্শকাতর তথ্য সংগ্রহের কৌশল দীর্ঘদিন ধরে প্রয়োগ করে আসছে, বিশেষ করে শীতল যুদ্ধের সময়।

১৯৮৭ সালে প্রকাশিত মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নথিতে দেখা যায়, সোভিয়েত ব্লক ও চীনে অবস্থানরত মার্কিন কর্মকর্তাদের স্থানীয় নাগরিকদের সঙ্গে বন্ধুত্ব, ডেটিং বা যৌন সম্পর্ক স্থাপনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল। কারণ, এক মার্কিন মেরিন সেনাকে মস্কোতে এক সোভিয়েত গুপ্তচর ফাঁদে ফেলেছিল।

সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর ১৯৯১ সালে এই নিষেধাজ্ঞাগুলো শিথিল করা হয়েছিল, তবে চীনে এতদিন পর্যন্ত এমন একটি সর্বাত্মক নিষেধাজ্ঞা ছিল না।

বেইজিং দীর্ঘদিন ধরে মার্কিন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে “হানিপট” (প্রেমের ফাঁদ) কৌশল প্রয়োগ করছে বলে মার্কিন কূটনীতিক ও গোয়েন্দা বিশেষজ্ঞরা দাবি করেন। মার্কিন কর্মকর্তাদের চীনে পাঠানোর আগে ব্রিফিংয়ে এমন উদাহরণ তুলে ধরা হয়, যেখানে চীনা গোয়েন্দা সংস্থা মার্কিন কূটনীতিকদের প্রলুব্ধ করতে আকর্ষণীয় নারী পাঠিয়েছে।

সাবেক সিআইএ বিশ্লেষক পিটার ম্যাটিস বলেন, মার্কিন সরকারের অভ্যন্তরীণ তথ্য সংগ্রহে আরও আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছে, যা এই নতুন নীতি দ্বারা প্রতিফলিত হয়।

চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে সরাসরি মন্তব্য করেনি, তবে এক বিবৃতিতে বলেছে যে, এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের জন্য আরও উপযুক্ত।

এদিকে, চীন নিজেও তাদের কর্মীদের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেইজিং সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশি নাগরিকদের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলে পদোন্নতি বন্ধ করে দিয়েছে এবং কূটনীতিকদের নির্দিষ্ট একটি দেশে দীর্ঘ সময় ধরে অবস্থান করতে দেওয়া হচ্ছে না।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং অন্যান্য সরকারি সংস্থা তাদের কর্মকর্তাদের বিদেশি নাগরিকদের সঙ্গে রোমান্টিক বা যৌন সম্পর্ক স্থাপনে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, আর সামরিক ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের অনুমতি ছাড়া চীন ছাড়ারও অনুমতি নেই।

আরও পড়ুন

আরও সংবাদ