চলমান বিপিএলের মধ্যেই মাঠের বাইরের নানান ইস্যুতে উত্তাল দেশের ক্রিকেট। থমকে আছে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটও। সেসব সমাধানেই গতকাল বিকাল ৩টায় চলতি বছরের দ্বিতীয় বোর্ড সভায় বসে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। এই সভায় বেশ কয়েকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। তার মধ্যে অন্যতম হলো বিসিবির স্ট্যান্ডিং কমিটি। তার পরই গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু ছিল ঢাকার ক্লাবগুলো নিয়ে গেল কয়েক দিন ধরে চলা উত্তাপ। পাশাপাশি বিপিএলে খেলোয়াড়দের পাওনা টাকা আদায়ের বিষয়টিও ছিল।
প্রায় চার ঘণ্টা ধরে চলা এই সভা শেষে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন বিসিবি পরিচালক ইফতেখার রহমান মিঠু ও মাহবুব আনাম। সেখানে তারাই জানান মিটিংয়ে হওয়া সিদ্ধান্তগুলো। বিসিবির নতুন সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরই জানিয়েছিলেন, বিসিবি গঠনতন্ত্রে সংশোধন আনা হবে। সেটির ধারাবাহিকতায় পরিচালক নাজমুল আবেদীন ফাহিমকে প্রধান করে গঠনতন্ত্র সংশোধনের জন্য পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছিল বিসিবি। আর এই কমিটির করা গঠনতন্ত্র সংশোধনের একটি খসড়া প্রস্তাব করার পর থেকেই অস্থির হয়ে উঠেছিল ঢাকার ক্লাবগুলো।
কারণ সেখানে তারা ঢাকার ক্লাব ক্রিকেট থেকে পরিচালক সংখ্যা কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তার পরই শুরু হয় প্রতিবাদ। পরে গেল সপ্তাহে ক্লাব প্রতিনিধিরা বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে সভাপতি সমস্যা নিরসনে চার থেকে পাঁচ দিন সময় চেয়ে নেয়। তারপর শনিবারের এই বোর্ড মিটিং। স্বাভাবিকভাবেই ঐ বিষয়টাই যে সভার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল, তা বলাই চলে। কারণ অচল অবস্থায় পড়ে আছে দেশের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট।
ফাহিমের নেতৃত্বে ঐ কমিটি স্থগিত ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। এ প্রসঙ্গে বিসিবি পরিচালক মাহবুব আনাম বলেন, ‘সভায় এ বিষয়ে দীর্ঘ সময় ধরে আলোচনা হয়েছে। তাতে গঠনতন্ত্রে সংশোধন আনার জন্য যেই কমিটি গঠন করা হয়েছিল, সেটার কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। পরবর্তীকালে এই কমিটি পরিবর্তন বা পরিবর্ধন করা হবে। পাশাপাশি সেটার জন্য তাদের কাজের পরিধির সীমাবদ্ধতা তৈরি করার পরই এই কমিটির কার্যক্রম আবার আমাদের (বিপিএলের) ভাবমূর্তি নষ্ট করছে, আমরা সবাই উপলব্ধি করতে পেরেছি। এক্ষেত্রে বোর্ড মনে করেছে আগে নিজেদের স্বচ্ছ রাখা দরকার শুরু হবে।’
অর্থাৎ ঢাকার ক্লাবগুলোর চাওয়া পূরণ হয়েছে। তাতে থেমে থাকা প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট মাঠে গড়াতে আর কোনো বাধা নেই। এ দিকে এই সভার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল, চলমান বিপিএলে ফ্রাঞ্চাইজিগুলোর খেলোয়াড়দের বকেয়া না পাওয়া। কেননা গেল কয়েক দিন ধরে এটা নিয়েই সর্বত্র চলছে আলোচনা। শুধু দেশ নয়, দেশের বাহিরেও এটা নিয়ে সমালোচনা চলছে। কারণ ফ্রাঞ্চাইজিগুলো শুধু দেশি ক্রিকেটারদের টাকা বকেয়া রেখেছে, এমনটি নয়, বিদেশি অনেক খেলোয়াড়ও এখনো নিজেদের চুক্তি অনুসারে টাকা পায়নি।
তাই বোর্ড সভায় এই সমস্যা আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সমাধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান পরিচালকরা। বলেন, ‘কয়েক দিন ধরেই আমরা দেখছি কিছু কিছু ফ্রাঞ্চাইজি খেলোয়াড়ের পেমেন্ট এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক সমস্যা হচ্ছে, যেটা আমরা খুব মনোযোগ সহকারে পর্যবেক্ষণ করছি; এবং দ্রুত সময়ের মধ্যেই ক্রিকেট বোর্ড এটা সমাধান করার জন্য তাগিদ দিয়েছে। আগামী দুই দিনের মধ্যেই এটা সমাধান করার চেষ্টা করা হচ্ছে। মানে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খেলোয়াড়দের পাওনা টাকা সমাধানের চেষ্টা করবে। খেলোয়াড়দের আশ্বস্ত করবে যে, কোনো সমস্যা নেই। কারণ এটার সঙ্গে দেশের ক্রিকেটের সম্মান জড়িত।’
চলমান বিপিএলে শুরুর আগে থেকেই আলোচনায় দুর্বার রাজশাহী। সেই সময় তাদের নিয়ে আলোচনার বিষয় ছিল খেলোয়াড়দের নিয়ে। কোনো রকমে দল বানিয়েছে তারা। তবে সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই আলোচনা গিয়ে ঠেকে খেলোয়াড়দের পাওনা টাকা নিয়ে। যদিও যা খেলোয়াড় অবধি সীমাবদ্ধ থাকেনি। শোনা যাচ্ছে দল যে হোটেলে থেকেছে, সেখানেও টাকা বাকি পড়ে আছে।
এ নিয়ে বিসিবি পরিচালক মাহবুব আনাম বলেন, ‘এ নিয়ে আমরা সভায় পরিষ্কারভাবেই আলোচনা করেছি। এটা যে আমাদের (বিপিএলের) ভাবমূর্তি নষ্ট করছে, আমরা সবাই উপলব্ধি করতে পেরেছি। এক্ষেত্রে বোর্ড মনে করেছে আগে নিজেদের স্বচ্ছ রাখা দরকার। আর এই বিষয়গুলো পরিষ্কারভাবেই জানিয়ে দেওয়া উচিত যে আগে যেই ভুলগুলো হয়েছে, সেগুলো যেন ভবিষ্যতে আর না হয়।’ এ সময় চলমান আসর থেকে শিক্ষা নিয়ে আগামী নারী বিপিএলেও সতর্ক থাকবে বিসিবি বলে জানান তারা।