কাবেরী মৈত্রেয় : স্বল্প বিনিয়োগ অথচ বিলিনিয়র হতে চান তাহলে আপনার অর্থ লগ্নী করুন ভাচুর্য়াল মুদ্রায় যাকে বলতে পারেন ক্রিপ্টো কারেন্সী। এই মুদ্রা নাকি যে কোনও বিনিয়োগকারীর পকেট ভরিয়ে দিতে পারে৷ এই পথে রোজগার করে বেশ কিছু মানুষ ভালই সম্পত্তি বানিয়েছেন । সে কথা রটায় অন্য আরও অনেকে উৎসাহীত হচ্ছেন এই পথে লগ্নি করতে ৷
মূলত, ক্রিপ্টোকারেন্সি পেমেন্টের ক্ষেত্রে বিশ্বজুড়ে একটি মডেল হওয়ার উদ্দেশ্যে ছিল৷ তবে বর্তমানে, মানুষ অর্থ উপার্জনের জন্য ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগ করছে।এটি যতটা সহজ মনে হচ্ছে ততটা সহজ নয়। বোঝার অভাবের কারণে অনেক লোক এখানে এসে অর্থ হারাচ্ছে অথবা অনেকে এই পথ ছেড়ে চলে যাচ্ছে।
ক্রিপ্টোকারেন্সির ক্ষেত্রটি এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে এবং ক্রিপ্টো-সম্পদ বাজারটি ব্যাপক অস্থির অবস্থায় থাকার ফলে দামের ওঠানামা এর একান্ত সঙ্গী।যখন দাম বৃদ্ধি পায় তখন বিনিয়োগকারীরা এই ক্ষেত্রের প্রতি আকৃষ্ট হয় এবং প্রবেশ করে আবার বাজার বিপর্যয়ের সঙ্গে সঙ্গে তাদেরও ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়তে হয়।কিন্তু কিছু নির্দিষ্ট কৌশল আছে যা অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারীরা ক্রিপ্টোকারেন্সি থেকে অর্থ উপার্জনের জন্য ব্যবহার করেন।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এক দশক ধরে ডিজিটাল এ মুদ্রা ব্যবহারের প্রচলন শুরু হয়েছে। যদিও অনেক দেশে ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহারে আইনগত বাধা রয়েছে। তবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ক্রিপ্টোকারেন্সির মতো ডিজিটাল মুদ্রার ব্যবহার বাড়ছে। গত বছর সবচেয়ে বেশি ভারত ও নাইজেরিয়ায় ক্রিপ্টোকারেন্সিসহ বিভিন্ন ধরনের ডিজিটাল মুদ্রার ব্যবহার বেড়েছে। এক প্রতিবেদনে এমন মুদ্রার ব্যবহার বাড়ার প্রবণতার কথা জানা যায়।
ব্লকচেইন অ্যানালিটিকস কোম্পানি চেনালাইসিস বলছে, ১৫১টি দেশে ডিজিটাল মুদ্রা হিসেবে ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহারে তালিকার শীর্ষে আছে ভারত, নাইজেরিয়া ও ইন্দোনেশিয়া।
কোন দেশ কেমন ক্রিপ্টো গ্রহণ করছে, সেই তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ৩৫ দেখানো হয়েছে। বাংলাদেশের চেয়ে পেছনে আছে মিয়ানমার, তাদের অবস্থান ৭৮। পাকিস্তানের অবস্থান ৯, শ্রীলঙ্কার অবস্থান ৭২, নেপালের অবস্থান ৭১ নম্বরে। তালিকা অনুসারে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ৪, কানাডা ১৮, রাশিয়া ৭, চীন ২০, জাপান ২৩ ও অস্ট্রেলিয়া ৩৯ নম্বরে।
চেনালাইসিসের বৈশ্বিক সূচকের শীর্ষ ২০টি দেশের মধ্যে ৭টি মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশ। ভারতে দুই বছর ধরে ডিজিটাল মুদ্রা ব্যবহারের বেশি প্রবণতা দেখা গেছে।
ব্যবহারের আইনগত অনুমতি না থাকলেও তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ৩৫। এখন চলুন জেনে নেই বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অবস্থায় এই ক্রিপ্টোকারেন্সী কেন উপযোগি ? বলে নেয়া ভাল, বাংলাদেশে ক্রিপ্টোকারেন্সির ব্যবহার এখনো সরকারিভাবে নিষিদ্ধ হলেও, এর সম্ভাবনা অগ্রাহ্য করা যায় না। বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সার, আইটি কর্মী এবং উদ্ভাবনমূলক উদ্যোক্তাদের মধ্যে ক্রিপ্টোকারেন্সির ব্যবহার হতে পারে অর্থনৈতিক উন্নতির একটি অন্যতম মাধ্যম।
মূলত এটি অনলাইন বাণিজ্য ও ফ্রিল্যান্সারদের জন্য সহায়ক । বাংলাদেশের হাজারো ফ্রিল্যান্সার ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন করতে পারেন, যা তাদের আয়ের সুরক্ষা দিতে পারে।
আবার বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণেও এটি কাজে দেয় । বিদেশে বিপুল ডলার খরচ করে বহর নিয়ে গিয়ে এই যে ব্যাংকাররা প্রবাসীদের কাছে বিনিয়োগ আশা করছে এর পরিবর্তে এ মুদ্রায় বিনিয়োগ করলে বিদেশি বিনিয়োগ পানির প্রভাবের মতো সসম্ভব । স্টার্টআপ এবং ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ সহজতর হতে পারে।
বলে রাখা ভাল, গেলো এক ধমকে নানান রকম পদক্ষেপ নেবার পরও কিন্তু দেশের সকল আয়যোগ্য মানুষ কিন্তু ব্যাংকিংয়ের আওতায় আসেনি । অনেক মানুষ এখনো ব্যাংকিং সুবিধা থেকে বঞ্চিত। ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহার করে তারা সরাসরি লেনদেন করতে পারে।
আবার এ দেশে ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু ঝামেলাও আছে এগুলো সমাধান করা সম্ভব হলে দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোতে নতুন একটি মাত্রা যুক্ত হতে পারে।
যেমন ধরুন আইনি সীমাবদ্ধতা । বাংলাদেশে এখনো ক্রিপ্টোকারেন্সি নিষিদ্ধ এবং আইনগত স্বীকৃতি নেই। এ কারণে ব্যবহারকারীরা অবৈধ কার্যকলাপের ঝুঁকিতে থাকতে পারেন। সরকারি পর্যায়ে একটি সুনির্দিষ্ট নিয়ন্ত্রণ কাঠামো গড়ে তোলা যেতে পারে, যা বৈধভাবে ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহারকে স্বীকৃতি দেবে এবং নিয়ন্ত্রণ করবে।
ক্রিপ্টোকারেন্সির সঙ্গে জালিয়াতি এবং হ্যাকিংয়ের ঝুঁকি রয়েছে, যা ব্যবহারকারীদের জন্য একটি বড় উদ্বেগ। উন্নত সাইবার সুরক্ষা প্রযুক্তি এবং নিয়মিত মনিটরিং ব্যবস্থার মাধ্যমে এ সমস্যাগুলো মোকাবিলা করা যেতে পারে।
বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে প্রযুক্তিগত শিক্ষার অভাব এবং ক্রিপ্টোকারেন্সির জ্ঞান সীমিত। সরকারি এবং বেসরকারি উদ্যোগে শিক্ষামূলক কার্যক্রম ও কর্মশালার আয়োজন করে জনগণের মধ্যে ক্রিপ্টোকারেন্সি এবং ব্লকচেইন সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা যেতে পারে।
তবে চ্যালেঞ্জ যাই থাকুক বিটকয়েন বিশ্বের অর্থনৈতিক এবং প্রযুক্তিগত খাতে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে। বাংলাদেশের জন্য এটি একটি সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র, যা তরুণদের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন এবং অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তিতে সহায়ক হতে পারে। তবে আইনি নিরাপত্তা ও প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জগুলো সমাধান করা প্রয়োজন। সরকারি ও বেসরকারি খাতের সহযোগিতায় যথাযথ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ও নীতিমালা গড়ে তোলা হলে বাংলাদেশেও ক্রিপ্টোকারেন্সি অর্থনৈতিক উন্নয়নে একটি নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে।