কাজী জহিরুল ইসলাম :
নানা উৎস থেকে নিয়মিত রণাঙ্গনের খোঁজ নিতেন দৈনিক বাংলার সিনিয়র সাংবাদিক ফওজুল করিম। একজন দায়িত্বশীল সাংবাদিক হিসেবে মুক্তিযোদ্ধাদের সাফল্য, ঝুঁকি, ক্ষয়ক্ষতি, মা-বোনদের নির্যাতনের খবর এবং মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বপূর্ণ অপারেশনের খবর তো নিতেনই, যেভাবেই হোক সব-সময় কমলের হালনাগাদ অবস্থা ও অবস্থানের খোঁজ-খবর রাখতেন তিনি অতি গোপনে। যখনই মনে পড়ত তারই আপন চাচাতো ভাই, কমল, ২৭ মার্চ কালুর ঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন তখনই গর্বে বুকটা উঁচু হয়ে উঠত। কমল যে ওর চাচাতো ভাই, এ-কথা জানতেন শুধু একজন, দক্ষ রিপোর্টার মনজুর আহমদ। মনজুর আহমদকে তারা ভাই পছন্দ করতেন দুটি কারণে, প্রথমত তার পেশাগত সততা, দ্বিতীয়ত তার গল্প লেখার দক্ষতা। একের মধ্যে দুই, সাংবাদিক এবং কথাসাহিত্যিক।
নিউইয়র্কে বসবাসকারী বর্ষীয়ান সাংবাদিক মনজুর আহমদের সঙ্গে বাংলাদেশের রাজনীতি, ইতিহাস, সংবাদপত্র জগতের নানান খুঁটিনাটি নিয়ে প্রায়শই আমার কথা হয়। আমরা ফোনে দীর্ঘসময় ধরে গল্প করি। এইসব কথোপকথনের মধ্য দিয়ে তার ৬ দশকের সাংবাদিকতা জীবনের বহু অভিজ্ঞতার কথা জেনেছি। আজ শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সঙ্গে মনজুর আহমদের যোগাযোগের গল্পগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করব। তিনিই দৈনিক বাংলা পত্রিকার জন্য ২০ মার্চ ১৯৭২ সালে তৎকালীন লে. কর্নেল জিয়াউর রহমানের প্রথম সাক্ষাৎকারটি নেন, যা দৈনিক বাংলার স্বাধীনতা দিবস সংখ্যায়, ১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ, ছাপা হয়। একই সঙ্গে জিয়াউর রহমানের নিজের লেখা “একটি জাতির জন্ম” স্মৃতিচারণমূলক নিবন্ধটিও ছাপা হয়। নাতিদীর্ঘ এই রচনাটি জিয়াউর রহমান লিখেছিলেন মনজুর আহমদ কর্তৃক উদ্বুদ্ধ হয়েই এবং ১৯৭২ সালের ২১ মার্চ সকালে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে নিজের অফিসে বসে মনজুর আহমদকে বিদায় দেবার প্রাক্কালে হাতের লেখা পাণ্ডুলিপিটি তার হাতে তুলে দেন। দেশ স্বাধীন হয়ে গেছে। নিয়াজী আত্মসমর্পণ করেছে। পুরো দেশ বিজয়ের আনন্দে উত্তাল।
সপ্তাহখানেক পরের একদিন। সূর্য ডুবে গেছে।
পশ্চিমাকাশের লাল আলোও মিইয়ে গেছে ঠিক অনেকক্ষণ আগে। আস্তে আস্তে শীতের অন্ধকার চেপে ধরছে ঢাকা শহরকে। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ। হালকা একটি সোয়েটার গায়ে মনজুর আহমদ টেবিলের ওপর ঝুঁকে পড়ে নিউজপ্রিন্টের প্যাডে রিপোর্ট লিখছেন। ফওজুল করিম, যাকে সবাই তারা ভাই হিসেবেই চেনেন, ছুটতে ছুটতে মনজুর আহমদের টেবিলের সামনে এসে দাঁড়ান।
পুরো নব্বই ডিগ্রি ঝুঁকে মুখটা মনজুর আহমদের কানের কাছে এনে বলেন, কমল ফিরে এসেছে। আজই ফিরেছে, দেখা করতে যাবো। যাবে নাকি?
মনজুর আহমদ কলমটা রেখে সোজা হয়ে দাঁড়ান।
কখন যাবেন?
কাল সকালে। খুব সকালেই যেতে হবে। ও নিশ্চয়ই সকাল সকাল অফিসে চলে যাবে, তার আগেই ওকে ধরতে হবে।
অবশ্যই যাবো। কোথায় উঠেছেন?
শান্তিনগরে, ওর বড় ভাইয়েরা মোজাম্মেল হক সাহেবের বাড়িতে। কাগজ দাও, ঠিকানা লিখে দিচ্ছি, তুমি তোমার মত চলে এসো। সকাল সাতটার মধ্যে আসবে কিন্তু, নাহলে ওকে পাবে না।
পরদিন সকাল সাতটায় মনজুর আহমদ শান্তিনগরে খালেদা জিয়ার বড়ো বোন খুরশীদ জাহান হক, যাকে সবাই চকলেট আপা হিসেবেই চেনেন, তার বাড়িতে গিয়ে হাজির হন। তারা ভাই আগেই পৌঁছে গেছেন। তারা ভাইয়ের সঙ্গে বসে মনজুর আহমদ যুদ্ধের পুরোটা সময় ধারে পরিকল্পনা করেছেন, সেক্টর কমান্ডার মেজর জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধ থেকে ফিরে এলে দৈনিক বাংলার জন্য তার একটি দীর্ঘ সাক্ষাৎকার নেবেন। শান্তিনগরের এই বাড়িটিতে আসতে আসতে সেই দীর্ঘ পরিকল্পিত সাক্ষাৎকারের হাজারো প্রশ্ন মনজুর আহমদের মাথায় কিলবিল করছিল।
ড্রয়িংরুমে বসলেন ওরা। খুব বেশি সময় অপেক্ষা করতে হলো না। সামরিক ইউনিফর্ম পরা জিয়াউর রহমান ভেতর থেকে বেরিয়ে এলেন। এসেই স্মিত হেসে জিজ্ঞেস করেন, কেমন আছেন তারা ভাই?
তারা ভাই তার স্নেহের কমলকে জড়িয়ে ধরতে গেলে জিয়াউর রহমান তার সামরিক গাম্ভীর্য ঠিক রেখে হাত বাড়িয়ে দেন। হাতটা ধরেই তারা ভাই একেবারে বাংলা সিনেমার সংলাপের মত বলে ওঠেন, আমি জানতাম কমল, তুমি এটা পারবে।
মনজুর আহমদকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, আমাদের কাগজের জন্য ও তোমার একটা সাক্ষাৎকার নেবে।
একজন নিপাট ভদ্রলোক মেজর জিয়া মনজুর আহমদের সঙ্গে করমর্দন করলেন। সোফায় বসলেন। একসঙ্গে চা খেলেন। চা খেতে খেতে মনজুর আহমদ বলেন, আপনার কাছ থেকে অনেক কিছু জানার আছে আমাদের।
জিয়াউর রহমান বিনয়ের সঙ্গে, অথচ বেশ দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, সাংবাদিক সাহেব, এখন নয়। কালই তো মাত্র দেশে এলাম, আগে দেশের পরিস্থিতি বুঝে নেই, আমি বসবো আপনার সঙ্গে, আমারও অনেক কথা বলার আছে, সময় হলেই আমি আপনাকে ডাকবো।
সামরিক গাড়িতে করে ওদের দুজনকে দৈনিক বাংলার অফিসে নামিয়ে দিয়ে জিয়াউর রহমান চলে যান আর্মি হেডকোয়ার্টারে।
একথা কম-বেশি আমরা সবাই জানি জিয়াউর রহমান ছিলেন একজন নির্লোভ, সৎ এবং খাঁটি দেশপ্রেমিক সৈনিক এবং পরে রাষ্ট্রনায়ক। তার সততার দুয়েকটি দৃষ্টান্ত দিই। এখন তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, ‘মিট দ্য প্রেস’ এর সভা হচ্ছে ঢাকা সেনানিবাসে। মনজুর আহমদ দৈনিক বাংলার প্রতিনিধি হিসেবে সব সময় প্রেসিডেন্ট বিট কাভার করতেন।
তিনিও আছেন সেই মিটিংয়ে। মিটিং শেষ হয়ে যাবার পর একজন দৌড়ে প্রেসিডেন্টের খুব কাছে চলে আসেন। এসেই বলেন, “স্যার আমার প্লটটা নিয়ে খুব ঝামেলা হচ্ছে, আপনি যদি একটু বলে দিতেন।” জিয়াউর রহমান তার দিকে তাকিয়ে বলেন, আপনার প্লট আছে নাকি? আমার তো প্লট নেই। ব্যাস, ভদ্রলোক যা বোঝার বুঝে গেলেন। এভাবেই তিনি সকল প্রকার তদ্বিরকে নিরুৎসাহিত করতেন।
লে. কর্নেল পদে পদোন্নতি নিয়ে জিয়াউর রহমান যোগ দেন কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে। তিনিই ক্যান্টনমেন্টের জিওসি। আমরা জানি ক্যান্টনমেন্টের ডিসিরা হন দুই তারকা খচিত জেনারেল বা মেজর জেনারেল কিন্তু তখন যেহেতু লে. কর্নেলের চেয়ে উপরের অফিসার প্রায় ছিলই না, এই পদমর্যাদার হয়েই মুক্তিযুদ্ধের একজন সেক্টর কমান্ডার হিসেবে, তিনিই জিওসির দায়িত্ব পালন করেন।
এর মধ্যে কেটে যায় প্রায় আড়াই মাস। তারা ভাই এবং মনজুর ভাই কিন্তু ভোলেননি তাদের কাঙ্ক্ষিত সাক্ষাৎকারের কথা। দৈনিক বাংলা কর্তৃপক্ষ ঠিক করে, স্বাধীনতা দিবস সংখ্যায় মুক্তিযুদ্ধের সমর নায়কদের সাক্ষাৎকার ছাপা হবে। আতাউল গণি ওসমানী, জিয়াউর রহমান, খালেদ মোশাররফ প্রমুখের সাক্ষাৎকার নেওয়া হবে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত এই দৈনিকটির জন্য। মার্চের ১৯ তারিখে বার্তা সম্পাদক ফওজুল করিম ফোন করেন কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে। ওপাশ থেকে জিওসি জিয়াউর রহমান জানান, কালই পাঠিয়ে দিন।
২০ মার্চ, ১৯৭২। বেশ ভোরে বিআরটিসি বাসের টিকিট কেটে উঠে পড়েন মনজুর আহমদ। এবার তিনি একা, সঙ্গী হিসেবে তারা ভাই নেই সাথে।
যুদ্ধে বিধ্বস্ত রাস্তাঘাট। বাসে যাত্রীদের ভিড়। সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে চালকের সহযোগিতায় কোনোরকমে একটা সিট পাওয়া গেল।
এখানে-ওখানে খানাখন্দ। ব্রিজ ভেঙে পড়েছে। দু’বার নৌকায় করে নদী পাড় হতে হলো। শেষমেশ যখন এসে পৌঁছলেন তখন প্রায় বিকেল। খিদেয় পেট চোঁ চোঁ করছে। প্রথমেই একটি রেস্টুরেন্ট খুঁজে পেট পুরে খেয়ে নিলেন। তারপর ক্যান্টনমেন্টে, সোজা কমান্ডারের বাড়িতে। চকলেট আপা তখন ও বাড়িতেই ছিলেন। তিনিই দরজা খুলে দেন। খালেদা জিয়া এসে অতিথিকে রিসিভ করেন। জিয়াউর রহমান তখন অফিসে। ফোনে যোগাযোগ হলে প্রথমেই খোঁজ নিন, অতিথির দুপুরের খাওয়া হয়েছে কি-না। মনজুর আহমদ নিশ্চিত করেন, তিনি তার রেস্টুরেন্ট থেকে পেটপুরে খেয়ে এসেছেন। এরই মধ্যে গাড়ি চলে আসে। মনজুর আহমদকে নিয়ে গাড়ি ছুটে যায় কমান্ডারের অফিসে।
শুরু হয় ইন্টারভিউ।
জিয়াউর রহমান বলতে থাকেন তার স্কুলজীবন, পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগদান, সেনাবাহিনীতে বাঙালি অফিসার, সৈনিকদের প্রতি পাকিস্তানিদের বৈষম্যের গল্প। একে একে উঠে আসে মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে বিদ্রোহ করা, নিজের কমান্ডিং অফিসারসহ পশ্চিম পাকিস্তানি অফিসারদের গ্রেফতার করা এবং মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দেওয়া।
বিকেল হয়ে গেলে জিয়াউর রহমান বাসায় ফোন করে স্ত্রীকে বলেন, চা-নাশতার ব্যবস্থা করো, আমি মেহমানকে নিয়ে আসছি।
তারা বাসায় আসেন। পাশাপাশি সোফায় দুজনই গা এলিয়ে দেন। খালেদা জিয়া ট্রেতে করে টি-পটে চা, তিনটি কাপ এবং একটি প্লেটে কিছু বিস্কুট নিয়ে আসেন। প্রথমে স্বামীর জন্য এবং অতিথির জন্য দুটো কাপে চা ঢালেন, ওরা নেবার পরে তৃতীয় কাপে চা ঢেলে নিজেও কাপ হাতে নিয়ে অন্য একটি সোফায় বসেন।
হঠাৎ জিয়ার কণ্ঠে কিছুটা উষ্মা। তিনি স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে, কিন্তু বিস্কুটের প্লেটের দিকে পিস্তলের নলের মত আঙুল তাক করে, খানিকটা অনুযুগের সুরে বলেন, এই নাশতা?
খালেদা জিয়া খুব ঘাবড়ে যান, তিনি লাফ দিয়ে উঠেই বলেন, না, না, আরো আসছে, যাচ্ছি আমি।
পরিস্থিতি বুঝতে পেরে মনজুর আহমদ বলেন, ভাবী, আমি মোটেও ক্ষুধার্ত নই, একটু আগেই পেট ভরে ভাত খেয়েছি। এক কাপ চা’ই আসলে দরকার ছিল।
এরপর জিয়াউর রহমানের দিকে তাকিয়ে বলেন, আপনার যদি লাগে তাহলে ভিন্ন কথা।
জিয়াউর রহমান তখন ঝাঁঝালো কণ্ঠেই বলেন, তাহলে থাক।
বেশ কিছুক্ষণ তিনজনের গল্প, আড্ডা হয়। এরপর আবার গাড়িতে চড়ে ফিরে যান অফিসে।
ইন্টারভিউ চলে রাত ১২টা অবধি। এরই মধ্যে অফিসার্স মেসে মনজুর আহমদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা হয়। এক ফাঁকে তারা নৈশভোজও সেরে আসেন। রাত বারোটায় মনজুর আহমদকে অফিসার্স মেসে নামিয়ে দিয়ে বাসায় চলে যান জিয়াউর রহমান।
পরদিন সকালে অফিসার্স মেস থেকে নাশতা করে সাংবাদিক মনজুর আহমদ বিদায় নিতে জিওসির অফিসে যান। সেখানে আরেক দফা চা খান। এরই মধ্যে সিগন্যালস কোরের একটি গাড়ি ঢাকায় যাবে, সেই গাড়িতে চড়ে মনজুর আহমদের ফেরার ব্যবস্থা করে ফেলেন কমান্ডার।
ঠিক এই সময়ে বেশ কয়েক পৃষ্ঠা হাতের লেখা কাগজ মনজুর আহমদের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে লে. কর্নেল জিয়াউর রহমান বলেন, আপনি তো সাংবাদিক মানুষ, লিখবেনই, আমিও একটা লিখেছি। মনজুর আহমদ কাগজের প্রথম পৃষ্ঠার ওপর চোখ রেখে দেখেন, শিরোনাম, “একটি জাতির জন্ম”। সবগুলো পৃষ্ঠা উল্টিয়ে দেখেন, কোথাও লেখকের নাম নেই। তখন তিনি বলেন, লিখেছেনই যখন, আপনার নামটাও লিখে দেন। তখন তিনি শেষ পৃষ্ঠায় লিখে দেন, জিয়াউর রহমান।
বেশ দীর্ঘ একটি লেখা। মনজুর আহমদ কৌতূহলী হয়ে জিজ্ঞেস করেন, কখন লিখলেন? তিনি বলেন,
আপনাকে নামিয়ে, কাল রাতে।
পাঠক, আপনারা যারা শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সেই লেখাটি পড়েছেন তারা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করে থাকবেন, সেখানে লেখা আছে, “পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের সপ্তাহখানেক পরে একজন সাংবাদিক আমাকে বলেছিলেন, সেই দুঃস্বপ্নে ভরা দিনগুলো সম্পর্কে কিছু স্মৃতিকথা লিখতে। আমি একজন সৈনিক। আর লেখা একটি ঈশ্বর প্রদত্ত শিল্প। সৈনিকরা স্বভাবতই সেই বিরল শিল্পক্ষমতার অধিকারী হয় না। কিন্তু সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তটি ছিল এমনই আবেগধর্মী যে আমাকেও তখন কিছু লিখতে হয়েছিল। কলম তুলে নিতে হয়েছিল হাতে।”
যে সাংবাদিকের অনুরোধে তিনি এই ঐতিহাসিক স্মৃতিচারণমূলক নিবন্ধটি লিখেছিলেন, এটা অনুমান করা অসংগত হবে না, তিনি সাংবাদিক মনজুর আহমদ। তবে জিয়াউর রহমানের চাচাতো ভাই সাংবাদিক ফওজুল করিম তারাও হতে পারেন, কেননা কোনো না কোনোভাবে তারা ভাইও জিয়াউর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিলেন। তবে যেহেতু তিনি সুস্পষ্ট করে বলেছেন, ১৬ ডিসেম্বরের সপ্তাহখানেক পরে একজন সাংবাদিক তাঁকে বলেছিলেন, এবং আমরা জানি ঠিক সেই সময়টাতেই তাঁর সাক্ষাৎকার নিতে গিয়েছিলেন মনজুর আহমদ, যদিও ফওজুল করিমও সঙ্গে গিয়েছিলেন, কিন্তু তিনি সাংবাদিক হিসেবে নয়, গিয়েছিলেন ভাই হিসেবে, সেখানে দুই ভাইয়ের আবেগঘন কথাবার্তাই বেশি হয়ে থাকবে, কাজেই এই কৃতিত্ব আমরা মনজুর আহমদকে দিতেই পারি।
জিয়াউর রহমান বলেছেন, ‘আপনাকে নামিয়ে দিয়ে কাল রাতে লিখেছি,’। কিন্তু এই রচনার দ্বিতীয় প্যারাতেই তিনি লিখেছেন “সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তটি ছিল এমনই আবেগধর্মী যে আমাকেও তখন কিছু লিখতে হয়েছিল। কলম তুলে নিতে হয়েছিল হাতে।” লিখতে হয়েছিল, পাস্ট টেস্টের ক্রিয়াপদটি হয়ত আমাদের বিভ্রান্তিতে ফেলে দিতে পারে। আমি মনে করি, কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে যাওয়ার পরে বিভিন্ন সময়ে তিনি এই রচনাটির প্রস্তুতি হিসেবে নোট নিয়েছিলেন বা খসড়া তৈরি করেছিলেন৷ সেটাকেই বলছেন, “কলম তুলে নিতে হয়েছিল হাতে”।
২০ মার্চ রাত বারোটায় মনজুর আহমদকে নামিয়ে দিয়ে তিনি হয়ত সারারাত জেগে সেই লেখাটা চূড়ান্ত করেন যাতে পরদিন সকালে তা মনজুর আহমদের হাতে তুলে দিতে পারেন।
যারা জিয়াউর রহমানের “একটি জাতির জন্ম” স্মৃচারণমূলক এই রচনাটি পড়েছেন তারা নিশ্চয়ই আমার সঙ্গে একমত হবেন যে একজন সৈনিক হয়েও তার ভাষাজ্ঞান এবং অভিজ্ঞতা বর্ণনা করবার দক্ষতা ছিল। আমি কাউকে কাউকে বলতে শুনেছি জিয়াউর রহমান বাংলা জানতেন না, এই