joybangladesh.tv
Sunday, June 1, 2025

ইসরায়েলবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ায় কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আটক

Share

জেবি টিভি রিপোর্ট : ইসরায়েলবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ায় মাহমুদ খলিল নামের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে আটক করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। পাশাপাশি তাকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারের চেষ্টা করছে প্রশাসন। তিনি বর্তমানে গ্রীন কার্ডধারী (স্থায়ী বাসিন্দা) এবং এ বিষয়ে তার আইনজীবীরা আদালতে মামলা করেছেন।

মাহমুদ খলিল গত ডিসেম্বরে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্তর্জাতিক ও পাবলিক অ্যাফেয়ার্স বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন। শনিবার নিউইয়র্কে অভিবাসন কর্মকর্তারা তাকে গ্রেপ্তার করে লুইজিয়ানার একটি ডিটেনশন সেন্টারে স্থানান্তরিত করে। ফিলিস্তিন বংশোদ্ভূত খলিলের স্ত্রী একজন আমেরিকান নাগরিক। তিনি ৮ মাসের গর্ভবতী।

জানা যায়, গত বছর গাজা যুদ্ধে ইসরাইলের প্রতি মার্কিন সমর্থনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে শিক্ষার্থীদের যে বিক্ষোভ হয় সেখানে বেশ শক্ত ভূমিকা নিয়েছিল কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। এসময় আন্দোলনে প্রধান সমন্বয়ক ছিলেন মাহমুদ খলিল। এ কারণেই তাকে আটক করেছেন কর্মকর্তারা।

এ বিষয়ে খলিলের আইনজীবীরা জানান, গ্রেপ্তারের সময় তারা কর্তৃপক্ষকে জানান যে খলিল গ্রীন কার্ডধারী এবং তাকে আটক করার কোনো বৈধ কারণ নেই। তবে অভিবাসন কর্মকর্তারা গ্রেপ্তার করে এবং তাকে লুইজিয়ানায় স্থানান্তরিত করে।

মঙ্গলবার ম্যানহাটনের ফেডারেল আদালত একটি রুল জারি করেছেন। সেখানে বলা হয়েছে, যতক্ষণ না খলিলকে আটকানোর বৈধতা পর্যালোচনা করা হয়, ততক্ষণ যেন তাকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কার না করা হয়। খলিলের আইনজীবীরা দাবি করেছেন, তার গ্রীন কার্ড রয়েছে।

তীব্র সমালোচনা ও ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া

এই গ্রেপ্তারটি ট্রাম্প প্রশাসনের ক্রমবর্ধমান কঠোর অভিবাসন নীতির অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে। ট্রাম্প প্রশাসন, বিশেষ করে ইসরায়েলবিরোধী ছাত্র বিক্ষোভের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে চাপ সৃষ্টি করার ক্ষেত্রে শক্ত অবস্থান নিয়েছে। ট্রাম্প সামাজিক মাধ্যমে বলেন, “এটি অনেকের মধ্যে প্রথম গ্রেপ্তার, এবং আরও অনেক আসছে।”

তিনি আরও বলেছেন, “যারা সন্ত্রাসের পক্ষে সমর্থন জানায়, তারা আমাদের জাতীয় এবং বৈদেশিক নীতির পরিপন্থী। তাদের এখানে থাকা উচিৎ নয়। আমরা আশা করি আমেরিকার সব বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজ এই বিষয়টি মেনে চলবে।”

এদিকে, খলিলের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা হলো তার নেতৃত্বে ইসরায়েল বিরোধী প্রতিবাদগুলি অ্যান্টি-সেমিটিক ছিল এবং এতে ইহুদি ছাত্রদের জন্য এক শত্রুতাপূর্ণ পরিবেশ তৈরি হয়েছিল। প্রশাসন দাবি করছে যে, খলিলের কার্যক্রম যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির জন্য হুমকি হতে পারে।

এটি এমন একটি সময়ের মধ্যে ঘটছে যখন ট্রাম্প প্রশাসন ইসরায়েল-বিরোধী প্রতিবাদের প্রতি তার কঠোর মনোভাব প্রকাশ করেছে। সম্প্রতি কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসরায়েল বিরোধী প্রতিবাদের কারণে ছাত্রদের উপর চলতে থাকা হয়রানির বিষয়টি সামনে আসে, যার জন্য ৪০০ মিলিয়ন ডলারের গ্রান্ট বাতিল করা হয়েছে।

আইনি চ্যালেঞ্জ এবং সংবিধানিক বিতর্ক

এদিকে, খলিলের আইনজীবীরা তার বিরুদ্ধে নেওয়া পদক্ষেপের আইনি বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তারা বলছেন, গ্রীন কার্ডধারী নাগরিকদের সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে, বিশেষ করে প্রথম সংশোধনী (স্বাধীন মত প্রকাশ) এবং পঞ্চম সংশোধনী (যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া) অধিকার। এই গ্রেপ্তারটি যুক্তরাষ্ট্রের আইনের অধীনে একটি বড় সাংবিধানিক চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে, বিশেষ করে যখন একজন স্থায়ী বাসিন্দাকে বহিষ্কারের চেষ্টা করা হচ্ছে।

আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন একটি আইনি ধারার প্রয়োগ অত্যন্ত বিরল এবং এটি প্রশাসনের বিরোধী মতামত বা বক্তব্যের উপর অত্যধিক হস্তক্ষেপের পরিচায়ক হতে পারে। নিউইয়র্ক সিভিল লিবার্টিস ইউনিয়নের আইনজীবী এ্যামি বেলশার বলেন, “এটি একটি বড় সঙ্কট, কারণ এই আইনি ধারাটি অতীতে খুব কমই প্রয়োগ হয়েছে এবং এটি অত্যন্ত অস্পষ্ট। এর মাধ্যমে প্রশাসন তাদের রাজনৈতিক বিরোধী মতামতকে লক্ষ্যবস্তু করতে পারে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবাদ এবং সরকারের নীতির বাস্তবায়ন

খলিলকে গ্রেপ্তারের ঘটনা এমন সময়ে ঘটেছে, যখন ট্রাম্প প্রশাসন ইসরায়েল বিরোধী প্রতিবাদ ও মুসলিম ছাত্রদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। ২০২৪ সালের নির্বাচনী প্রচারণার অংশ হিসেবে তিনি বিদেশি ছাত্রদের ভিসা বাতিল করার কথা বলেছিলেন যারা ইসরায়েল-বিরোধী প্রতিবাদে অংশ নিয়েছেন। তবে, খলিলের ক্ষেত্রে, তিনি গ্রীন কার্ডধারী নাগরিক, যাকে সরাসরি বহিষ্কারের চেষ্টা করা হচ্ছে, যা এই নীতির সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ হতে পারে।

কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে হামাসের হামলার পর খলিল এবং তার সহযোদ্ধারা ব্যাপকভাবে ইসরায়েল বিরোধী প্রতিবাদে অংশ নেন, যা দেশব্যাপী বিতর্কের সৃষ্টি করেছিল। “গ্লোবালাইজ দ্য ইনফিতাদা” বা “প্যালেস্টাইন ফ্রি ফ্রম দ্য রিভার টু দ্য সি” এই ধরনের স্লোগানগুলো ইসরায়েল ও প্যালেস্টাইনিদের মধ্যে আলাদা ধরনের অর্থ বহন করে এবং বিভিন্ন শ্রেণির জনগণের মধ্যে অ্যান্টি-সেমিটিক অভিযোগ তুলতে সাহায্য করেছে।

খলিলের গ্রেপ্তার এবং অভিবাসন প্রশাসনের পদক্ষেপ সারা দেশে মুক্তচিন্তা ও স্বাধীনতা সম্পর্কিত একটি বৃহৎ বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক অধিকার সংগঠনগুলি এই ধরনের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে একযোগভাবে আপত্তি জানিয়ে বলেছে, যে কোনো ধরনের রাজনৈতিক মতামতকে দমন করা বা এটি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা একটি গুরুতর সাংবিধানিক ঝুঁকি তৈরি করবে।

আশঙ্কা ও পরবর্তী পদক্ষেপ

খলিলের আইনজীবীরা আশা করছেন যে, তারা দ্রুত একটি সংবিধানিক চ্যালেঞ্জ নিয়ে আদালতে যাবেন। তারা জানিয়ে দিয়েছেন যে, আইনগতভাবে এই ধরনের পদক্ষেপ শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার চেষ্টা এবং এটি অভিবাসন আইনের ভুল প্রয়োগ। তারা জানিয়েছেন, এ ধরনের ঘটনার পরিণতি শুধু খলিলের জন্যই বিপদজনক নয়, বরং এটি যুক্তরাষ্ট্রে সমস্ত গ্রীন-কার্ডধারীদের জন্য বিপদজনক উদাহরণ হতে পারে।

এখনো স্পষ্ট নয় যে, খলিলের আটক এবং বহিষ্কারের মামলা কোন পথে এগোবে। আইনজীবীরা আশাবাদী যে, তারা দ্রুত আদালতে এই ইস্যুর সমাধান বের করবেন, তবে এটি রাজনৈতিক চাপ এবং পাবলিক মনোভাবের উপরও নির্ভরশীল হতে পারে।

আরও পড়ুন

আরও সংবাদ