joybangladesh.tv
Saturday, June 7, 2025

ইংরেজি যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি ভাষা

Share

জেবি টিভি রিপোর্ট : যুক্তরাষ্ট্রের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে ইংরেজিকে অনুমোদন দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত ১ মার্চ শনিবার ট্রাম্প এ বিষয়ে একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন তিনি। এই আদেশে ইংরেজিকে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি ভাষা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এ আদেশের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি সংস্থা ও যেসব প্রতিষ্ঠান ফেডারেল অর্থ পায়, তাদের নথিপত্র ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে অবশ্যই ইংরেজি ব্যবহার করতে হবে।

এই আদেশের মাধ্যমে ২০০০ সালে সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন স্বাক্ষরিত একটি নীতি বাতিল করা হলো, যেখানে সরকারি সংস্থাগুলোকে ইংরেজি না জানা ব্যক্তিদের ভাষাগত সহায়তা দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল।
আদেশে বলা হয়েছে, ‘ইংরেজিকে সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া শুধু যোগাযোগ সহজ করবে না, বরং জাতীয় মূল্যবোধকে আরও দৃঢ় করবে এবং একটি ঐক্যবদ্ধ ও দক্ষ সমাজ গঠনে সহায়তা করবে।’
আড়াইশ বছর আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর এবারই প্রথমবারের মতো ফেডারেল পর্যায়ে কোনো ভাষাকে সরকারিভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হলো।

তবে আদেশে স্পষ্ট করা হয়েছে, বর্তমানে যেসব ভাষাগত সহায়তা দেওয়া হচ্ছে, সেগুলো পরিবর্তন, বাতিল বা বন্ধ করার প্রয়োজন নেই। আদেশে আরও বলা হয়েছে, নতুন অভিবাসীদের স্বাগত জানানোর পাশাপাশি আমাদের জাতীয় ভাষা শেখা ও গ্রহণের নীতি উৎসাহিত করা যুক্তরাষ্ট্রকে একটি অভিন্ন আবাসভূমিতে পরিণত করবে এবং নতুন নাগরিকদের আমেরিকান স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে যেতে সহায়তা করবে।

এতে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘ইংরেজি জানা শুধু অর্থনৈতিক সুযোগ সৃষ্টি করে না, বরং এটি অভিবাসীদের তাদের কমিউনিটির সঙ্গে সংযুক্ত হতে, জাতীয় ঐতিহ্যে অংশ নিতে ও সমাজে অবদান রাখতে সাহায্য করে।’
এতে আরও বলা হয়েছে, ‘এটি বহুভাষী আমেরিকানদের দীর্ঘ ঐতিহ্য উদ্যাপন করে, যারা ইংরেজি শিখেছে এবং প্রজন্মের পর প্রজন্ম তাদের সন্তানদেরও এই ভাষা শেখানোর ধারা অব্যাহত রেখেছে।’
মার্কিন আদমশুমারি ব্যুরোর তথ্যমতে, যুক্তরাষ্ট্রের ৩৪ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় ৬ কোটি ৮০ লাখ মানুষ ইংরেজি ছাড়া অন্য ভাষায় কথা বলে। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে ১৬০টিরও বেশি আদিবাসী আমেরিকান ভাষা।
সংস্থাটির তথ্যমতে, ইংরেজির পর যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ভাষাগুলোর মধ্যে রয়েছে স্প্যানিশ, বিভিন্ন চীনা ভাষা ও আরবি।

এর আগে রিপাবলিকানরা ইংরেজিকে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি ভাষা হিসেবে ঘোষণা করতে চেয়েছিলেন। ২০২১ সালে হাউসের সদস্যরা এ বিষয়ে একটি আইন প্রণয়ন করলেও তা পাস হয়নি।
এই প্রচেষ্টার বিরোধীরা বলেছিলেন, ইংরেজি এমনিতেই যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপকভাবে প্রচলিত, ফলে এটিকে সরকারিভাবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রয়োজন নেই। তারা আরও আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে, সরকারি ভাষার স্বীকৃতি অ-ইংরেজি ভাষাভাষীদের প্রতি বৈষম্য বাড়াতে পারে।

২০২৪ সালের নির্বাচনি প্রচারের সময় ট্রাম্প কঠোর অভিবাসন নীতির পক্ষে অবস্থান নিয়ে অ-ইংরেজি ভাষাগুলোর প্রসঙ্গ তোলেন।
তিনি এক সমাবেশে বলেন, ‘এটি সত্যিই অবিশ্বাস্য- তারা এমন সব ভাষায় কথা বলে, যা এই দেশের কেউ কখনো শোনেনি। বিষয়টি ভয়ংকর।’

বিশ্বের প্রায় ১৮০টি দেশে সরকারি ভাষা রয়েছে এবং বেশিরভাগ দেশ একাধিক ভাষাকে সরকারিভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তবে যুক্তরাজ্যসহ কয়েকটি দেশে কোনো নির্দিষ্ট সরকারি ভাষা নেই।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ৩০টিরও বেশি অঙ্গরাজ্য ইংরেজিকে সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তবে আলাস্কা ও হাওয়াইয়ের মতো কিছু রাজ্যে বেশ কয়েকটি স্থানীয় ভাষাও সরকারি মর্যাদা পেয়েছে।
ইংরেজিকে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি ভাষা করার মাধ্যমে এই সত্য মুছে ফেলা যাবে না যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে লক্ষ লক্ষ স্প্যানিশ ভাষাভাষী এবং দীর্ঘ বহুভাষিক ইতিহাস রয়েছে।

ট্রাম্প স্বাক্ষরিত নতুন নির্বাহী আদেশে বলা হয়েছে যে ইংরেজি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি ভাষা হওয়া উচিত। ট্রাম্প প্রশাসন হোয়াইট হাউস ওয়েবসাইটের স্প্যানিশ ভাষার সংস্করণ এবং এক্স-এ স্প্যানিশ ভাষার অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়ার পর এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়। ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে অভিষেকের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই এগুলো হঠাৎ বন্ধ করে দেওয়া হয়।
ঐতিহাসিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সরকারি ভাষা ছিল না এবং দেশটি প্রতিষ্ঠার অনেক আগে থেকেই সেখানে স্প্যানিশ ভাষা ব্যবহৃত হতো।

স্পেন ১৫৬৫ সালে বর্তমান ফ্লোরিডায় প্রথম স্থায়ী বসতি স্থাপন করে, যা ইংরেজ বসতি স্থাপনকারীদের জেমসটাউন এবং ভার্জিনিয়া উপনিবেশ স্থাপনের প্রায় ৫০ বছর আগে। দক্ষিণ-পশ্চিমে স্প্যানিশ বসতি স্থাপন শুরু হয় ১৬০০ সালের গোড়ার দিকে এবং ১৯ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত এই ভাষার প্রাধান্য ছিল।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৪৩ মিলিয়ন মানুষ তাদের প্রাথমিক ভাষা হিসেবে স্প্যানিশ ভাষায় কথা বলে, যা সমগ্র জনসংখ্যার প্রায় ১৪%। যদি স্প্যানিশ ভাষাভাষীদের দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়, তাহলে মেক্সিকোর পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্প্যানিশ ভাষাভাষী দেশ।

নিউইয়র্কের তিনজন কংগ্রেস সদস্য গ্রেস মেং, আদ্রিয়ানো এসপাইলাট ও ইভেট ক্লার্ক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইংরেজিকে যুক্তরাষ্ট্রের দাপ্তরিক ভাষা করার পরিকল্পনার তীব্র বিরোধিতা করেছেন। তারা এটিকে বৈষম্যমূলক পদক্ষেপ বলে অভিহিত করেছেন। তাদের মতে এই উদ্যেঠস অভিবাসী এবং সীমিত ইংরেজি দক্ষতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের অধিকারকে ক্ষুণ্ন করে।

আরও পড়ুন

আরও সংবাদ