Saturday, February 8, 2025

আমরা ক্ষমতায় যাইনি, আমরা ক্ষমতায় যাব কি না জানি না: তারেক রহমান

Share

জেবি টিভি রিপোর্ট: বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘আমাদের কিছু কিছু নেতৃবৃন্দের মধ্যে একটি চিন্তা ঢুকে গেছে, বোধহয় আমরা ক্ষমতায় চলে গেছি। আপনাদের সবাইকে দৃঢ়ভাবে বলব, আমরা ক্ষমতায় যাইনি। আমরা ক্ষমতায় যাব কি না, জানি না। তখনই আমরা ক্ষমতায় যেতে পারব, যখন আমরা বাংলাদেশের মানুষের সমর্থন পাব। কাজেই জনগণের সমর্থন আমাদেরকে আদায় করতে হবে।

আপনার কথা, আপনার কাজ, আপনার ওঠাবসা, আপনার চলাফেরা—সবকিছুর ওপর নির্ভর করছে বিএনপির আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। আপনাকে মানুষ বিএনপি হিসেবেই চেনে। আপনার সবকিছু এমন হতে হবে, যাতে জনগণের সমর্থন আপনার প্রতি, আপনার দলের প্রতি থাকে। দলকে রক্ষা করা, দলকে সামনে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব আমার একার নয়, স্থায়ী কমিটির সদস্যদের নয়, দায়িত্ব আমাদের সবার।’

সোমবার বিকেলে বিএনপির ময়মনসিংহ ও খুলনা বিভাগীয় প্রশিক্ষণ কর্মশালায় ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান এসব কথা বলেন। ‘রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তি’ শীর্ষক এ কর্মশালা ময়মনসিংহে আয়োজন করা হয় নগরের টাউন হলের তারেক স্মৃতি অডিটরিয়ামে। খুলনায় এই কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয় নগরের প্রেসক্লাবের ব্যাংকুয়েট হলে।

সকাল সাড়ে নয়টায় কর্মশালা শুরু হয়। বিকেল চারটার দিকে তারেক রহমান বক্তৃতা শুরু করেন। তারেক রহমান বলেন, ‘আপনারা পত্রপত্রিকা দেখছেন, খবরাখবর রাখছেন। আপনারা যদি সবকিছু বিবেচনা করেন, দেখতে পাবেন, দিন যত যাচ্ছে, পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে, সামনে যে নির্বাচন, সেটি কিন্তু এত সহজ নয়। আমার গত ৩০-৩৫ বছরের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার আলোকে আমার কাছে মনে হচ্ছে, সামনে যে নির্বাচন আমরা ফেস করতে যাব, বলতে পারেন আমাদের একটি প্রধান প্রতিপক্ষ অনেক দুর্বল হয়ে গেছে। এরপরও এই নির্বাচন বাংলাদেশের যেকোনো নির্বাচনের চেয়ে অনেক কঠিন নির্বাচন হতে যাচ্ছে।’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা কাউকে ছোট করার উদ্দেশে বলছি না, গত কিছুদিন যাবৎ সমাজের অনেক ব্যক্তি অনেক সংস্কারের বিষয়ে কথা বলছেন। যাঁরা তিন মাস, চার মাস বা ছয় মাস আগেও সংস্কার নিয়ে কথা বলেননি কিন্তু বিএনপি এ সংস্কারের কথা আজ থেকে দুই বছর আগে বলেছে। আমরা তখন জানতাম না স্বৈরাচারের পতন কবে হবে, কবে স্বৈরাচার পালিয়ে যাবে দেশ ছেড়ে। যখন আমাদের সামনে পরিষ্কার কোনো কিছু ছিল না, তখন সংস্কারের কথা বলেছি।’

তারেক রহমান বলেন, ‘আমরা দেশের মানুষের জন্য কী করতে চাই, তার সংক্ষিপ্ত রূপ হচ্ছে ৩১ দফা। আমরা আগামী দিনে মানুষের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করতে পারলে আমরা দেশ ও দেশের মানুষের জন্য কী কী কাজ করতে চাই, সেটির একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণী নিয়ে আমরা একত্র হয়েছি। এগুলো শুধু নেতা-কর্মীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে হবে না। কারণ, দেশ তো শুধু আমাদের দল নিয়ে নয়। ২০ কোটি মানুষের জন্য এই দেশ। আপনি যদি দেশ ও দেশের মানুষের জন্য করতে চান, তাহলে আমাদেরকে এটি নিয়ে যেতে হবে মানুষের কাছে। অতীতে যখন দেশ পরিচালনার সুযোগ ছিল, অনেক কিছু করতে পেরেছি, আবার অনেক কিছু করতে পারিনি। এরপরও আমাদের সংস্কার প্রস্তাব প্রমাণ করে বিএনপি দেশের কথা চিন্তা করে, দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে।’

এক নেতার প্রশ্নের জবাবে তারেক রহমান বলেন, ‘একটি দেশকে শক্তিশালী করতে হলে প্রাইমারি শিক্ষার প্রতি জোর দিতে হবে। শিশুদের আদবকায়দা শেখাতে হবে। শিক্ষাক্ষেত্রের বরাদ্দে দালানকোঠা নির্মাণ কমিয়ে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। আমাদের সমাজে যাদের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে, তাঁদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত করা হবে। দুর্নীতি সামাজিকভাবে কমিয়ে আনতে হলে প্রাইমারি লেভেল থেকে তা কমিয়ে আনতে হবে। তাঁরা যদি বাচ্চাদের শেখান দুর্নীতি খারাপ, সমাজের জন্য ক্ষতিকর, তাহলে তা কমিয়ে আনতে ৫ থেকে ১০ বছর লাগবে।’

আগামী দিনে কৃষকদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা হবে জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘এক বিঘা জমি চাষ করতে যদি একজন কৃষককে ২০ হাজার টাকা সাপোর্ট দেওয়া যায়, তাহলে তাঁরা ৪০ হাজার টাকা উপার্জন করতে পারবেন। এটা তাঁদের জন্য বড় পাওয়া হবে। প্রত্যেক পরিবারকে দেওয়া হবে ফ্যামিলি কার্ডও, রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তাঁদেরকে সাপোর্ট করার জন্য। আমরা মনে করি একটি দেশকে সামাজিক ও রাজনৈতিক ভাবে শক্তিশালী করতে হলে স্থানীয় প্রশাসনকে শক্তিশালী করণ করতে হবে। আমরা সেই লক্ষ্যে কাজ করব।’

ময়মনসিংহে সকাল নয়টায় দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধন করেন দলের স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য নজরুল ইসলাম খান। কর্মশালায় বক্তব্য দেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ঈসমাইল জবি উল্লাহ, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শরীফুল আলম, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহাদী আমিন, বিএনপির কোষাধ্যক্ষ রশিদুজ্জামান মিল্লাত, বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক ওয়ারেস আলী মামুন, আবু ওয়াহাব আকন্দ, সাবেক এমপি রেহানা আক্তার রানু, কেন্দ্রীয় কৃষক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা হাবীবা প্রমুখ।

খুলনার কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপি ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক এ বি এম মোশাররফ, তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারি হেলাল, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন, গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক শামিমুর রহমান প্রমুখ।

আরও পড়ুন

আরও সংবাদ