joybangladesh.tv
Thursday, June 5, 2025

আইসের অভিযান অব্যাহত থাকলেও ভয় কমছে জনমনে

Share

জেবি টিভি রিপোর্ট : আইসের জিরো টলারেন্স অভিযান পরিচালিত হওয়ার পর থেকে অনেক মানুষ এখনো আতঙ্কে ভুগছেন। তবে আগের চেয়ে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করছে। অনেক গ্রিনকার্ডধারী, সিটিজেন এবং ওয়ার্ক পারমিটধারীরাও ভয়ে ছিলেন। এখন বৈধভাব যারা আছেন, তারা স্বস্তি নিয়ে চলাফেরা করছেন। আবার অনেকেই কাজে ফিরতে শুরু করেছেন। বাইরে বের হচ্ছেন।

অ্যাটর্নি খায়রুল বাশার বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই আইসের অভিযান শুরু হয়। এই সময়ে মানুষের মধ্যে প্রচণ্ড ভয় কাজ করছিল। তবে পরিস্থিতি আগে চেয়ে স্বাভাবিক হয়ে আসছে। এখন অনেকেই ঘর থেকে বের হচ্ছেন। কিছুদিন মানুষ ঘর থেকে বের হতেও ভয় পেতেন। দরজা-জানালাও খুলতে চাইতেন না। তবে আইসের অভিযান বন্ধ হয়নি। এখনো চলমান আছে। এই অভিযান চলাকালে তারা যাদেরকে ধরতে পারবে, তাদেরকে ডিপোর্ট করার জন্য প্রয়োজনীয় সব উদ্যোগ নেবে। তবে এখন নথিপত্রহীনদের স্বেচ্ছায় চলে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। কেউ নিজের ইচ্ছায় চলে গেলে আবার যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসতে পারবেন, এমনটাও বলা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবন্দরগুলোতে স্টুডেন্টদের অনেকেই সেকেন্ড কোশ্চেনিংয়ের মুখে পড়ছেন। তারা সেখানে সঠিকভাবে জবাব দিতে না পারলে তাদের ফেরত পাঠানো হতে পারে। এদিকে যারা এ দেশে বৈবাহিক সূত্রে গ্রিনকার্ড পেয়েছেন, তাদের বিয়ে যদি সত্যিকারের বিয়ে কিংবা বোনাফাইড বিয়ে না হয় এবং তারা সন্দেহের তালিকায় পড়লে তাদেরকেও সেকেন্ড কোশ্চেনিংয়ে পড়তে হচ্ছে। এটি হলে তিনি সঠিকভাবে বিয়ের ব্যাপারে জবাব দিতে না পারলে, প্রমাণ দিতে না পারলে, উল্টাপাল্টা উত্তর দিলে বিপদে পড়তে পারেন। ইমিগ্রেশনে কাউকে সন্দেহ হলে তার বিয়ে যে বোনাফাইড, সেটি তাকে প্রমাণ করতে হবে। সেখানে চাওয়া হতে পারে মোবাইল ফোনের পাসওয়ার্ডও। তাই মোবাইলের তথ্য থেকেও অনেক কিছুই বের করা সম্ভব। যারা বিয়ের মাধ্যমে গ্রিনকার্ড পেয়েছেন, তারা বিয়ের প্রমাণ সঙ্গে রাখুন সিটিজেন না হওয়া পর্যন্ত।

খায়রুল বাশার বলেন, যারা এ দেশে বোনাফাইড বিয়ে করেননি, যাদের জয়েন্ট ব্যাংক হিসাব নেই, লিজ নেই, তারা একসঙ্গে থাকেন এমন ট্যাক্স ফাইল করেননি বা বিয়ের পর একসঙ্গে থাকছেন না; তারা সন্দেহের তালিকায় আসবেন সহজেই। কেউ কেউ পারিবারিক কলহের কারণে আলাদা থাকছেন এবং তারা গ্রিনকার্ডের কন্ডিশন রিমুভ করার জন্য আবেদন করেছেন, সেই সব আবেদনকারীরাও কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হতে পারেন। মনে রাখতে হবে, গ্রিনকার্ডধারী যতবারই তার গ্রিনকার্ড নবায়ন করার জন্য আবেদন করবেন, ততবারই তার ঝুঁকি আছে, যদি বোনাফাইড ম্যারিড না হন।

তিনি আরও বলেন, যারা এখন গ্রিনকার্ডের জন্য আবেদন করছেন, এখানে থেকে স্ট্যাটাস অ্যাডজাস্ট করতে চাইছেন, তারাও সাবধান। কারণ এখন আই-৪৮৫ ফর্মে কিছু পরিবর্তন এসেছে। সেই সঙ্গে এখানে আই-৪৮৫ এর মাধ্যমে গ্রিনকার্ডের আবেদনের জন্য দুটি অতিরিক্ত ফর্মও জমা দিতে হবে। এই নতুন সম্পূরক ফর্ম যুক্ত হওয়ায় আগের চেয়ে এখান থেকে স্ট্যাটাস অব অ্যাডজাস্ট করাও কঠিন হবে। আগের মতো কেউ চাইলেই সহজে গ্রিনকার্ড পাবেন না। যারা সিটিজেনশিপের জন্য আবেদন করেছেন, তারা যদি গ্রিনকার্ড পাওয়ার পর পাঁচ বছরের মধ্যে আবেদন করে থাকেন, তাহলে ভালো।

এ দেশে গ্রিনকার্ড পাওয়ার পর যখনই কেউ সিটিজেন হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেন, তার উচিত সঙ্গে সঙ্গে সব নথিপত্র, ফিসহ যথাযথভাবে ফর্ম পূরণ করে, প্রয়োজন হলে আইনজীবীর সহায়তা নিয়ে আবেদন জমা দেওয়া। কারণ সিটিজেনশিপের আবেদনে আগামী দিনে কঠিন কঠিন নিয়ম যুক্ত হতে পারে। একবার আবেদন জমা হলে তখন আস্তে আস্তে প্রক্রিয়া চলবে। যারা কখনো কোনো ধরনের অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না এবং গুড মোরাল ক্যারেক্টার, তারা আবেদন করতে পারেন। তাদের জন্য সিটিজেনশিপ পাওয়া সহজ। তবে যারা বিয়ের মাধ্যমে গ্রিনকার্ড পেয়েছেন, সিটিজেনের আবেদন করার সময় তাকে প্রমাণ করতে হবে বিয়ের বিষয়টি। সেই সঙ্গে এটাও প্রমাণ করতে হবে, তারা একসাথে আছেন এবং সংসারে কোনো ঝামেলা নেই। তবে ডিভোর্স কিংবা সেপারেশন হলে এর প্রমাণ দিতে হবে। বোনাফাইড বিয়ে না হলে সমস্যা হতে পারে। এখন দিন যত যাবে, সিকিউরিটি চেক তত বেশি হবে। সিকিউরিটি চেকে কোনো কিছু ধরা পড়লে আটকে যেতে পারে সিটিজেনশিপ অ্যাপ্লিকেশন।

অ্যাপ্লিকেশন ডিনাই তো হতেই পারে। সেই সঙ্গে ডিপোর্টেশনের অর্ডার হতে পারে। এ ক্ষেত্রে কেউ যদি আবেদন প্রক্রিয়াধীন সময়ে দেশে বা বিদেশে কোথাও যান, যাওয়ার সময় কোনো সমস্যা হবে না কিন্তু তার বিরুদ্ধে অপরাধের তথ্য পেলে তাকে এয়ারপোর্টে আটকে দেওয়া হতে পারে। দেশে ফেরত পাঠাতে পারে। গ্রিনকার্ড বাতিলও করতে পারে।

গ্রিনকার্ড স্যারেন্ডার করার জন্য ৪০৭ ফর্ম সাইন করার জন্য দিতে পারে। যারা এ ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হবেন, তারা ৪০৭ ফর্ম সাইন করার মানে হলো তিনি তার কার্ড স্বেচ্ছায় স্যারেন্ডার করেছেন। আর প্রবেশ করতে পারবেন না। তাই আমরা বলি, বিমানবন্দরে ৪০৭ ফর্ম সাইন করতে দিলে আপনি আপনার কেসটি ইমিগ্রেশন জজের কাছে পাঠানোর জন্য বলতে পারেন। তখন সেটি ইমিগ্রেশন জজের কাছে যাবে। সেখানেই সিদ্ধান্ত হবে। এ ছাড়া যারা প্রতারণা করেছেন বা মিথ্যা তথ্য দিয়ে গ্রিনকার্ড পেয়েছেন, তারাও বিপদে পড়তে পারেন।

অ্যাটর্নি খায়রুল বাশার বলেন, এখন পারিবারিক কোটায় যুক্তরাষ্ট্রে আসার বিষয়টিতে নজর দিতে পারে বর্তমান প্রশাসন। সে ক্ষেত্রে এফ-৪ ক্যাটাগরির ওপর প্রভাব আসতে পারে। এফ-৪ ক্যাটাগরি অর্থাৎ ভাইবোনের ক্যাটাগরিতে কাউকে আনা কঠিন হবে বা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তাই যারা তাদেরর ভাইবোন এবং পরিবারকে আনতে চান, তাদের জন্য আবেদন করে রাখতে পারেন। আবেদন করে রাখলে একটা না একটা সময় তারা আসতে পারবেন। যদি আবেদন করা না থাকে, আবেদন বন্ধ করে দেওয়া হয়, তাহলে আর আবেদনই করা যাবে না। আগামীতে এগুলো অনেক ধীর গতিতে চলবে।

আরও পড়ুন

আরও সংবাদ