joybangladesh.tv
Wednesday, May 28, 2025

অপরাধ কমিয়ে নিউইয়র্কবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে : এরিক অ‍্যাডামস্

Share

জেবি টিভি রিপোর্ট : চলতি বছরের শুরু থেকে নিউইয়র্ক সিটিতে ছোট খাটো চুরি ৮ শতাংশ কমেছে বলে জানিয়েছেন সিটি মেয়র এরিক অ‍্যাডামস্। গত সোমবার কমিউনিটি অপ:এড-এ অ‍্যাডামস্ জানান, ক্ষুদ্র চুরি আমাদের ব্যবসা, কর্মজীবী মানুষ, ভোক্তা এবং সামগ্রিক জীবনমানকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। আমরা স্পষ্ট করে বলছি, আমরা খুচরা চোরচক্র এবং সংগঠিত অপরাধী গোষ্ঠীকে নিউ ইয়র্ক সিটির ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলির উপর আক্রমণ চালাতে দেব না।’

এসব ছোট ছোট চুরি বাণিজ্যিক এলাকাগুলোর উপর সবসময়ই বড় ধরনের প্রভাব ফেলে। সহিংস অপরাধের মূল‍্যায়ন যতটা সহজে করা যায়, খুচরা চুরির ক্ষেত্রে তা আরও কঠিন। এর কারণ বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ এবং চুরির প্রতিবেদন পদ্ধতি।

২০২৩ সালের শুরুতে বাণিজ্যিক এলাকাগুলোতে পুলিশ বাহিনীর টহল থাকা সত্ত্বেও, ক্রেতা সেজে দোকান থেকে চুরির ঘটনা বেড়েছে। তবে নিউইয়র্ক সিটির সম্প্রদায়গুলিকে নিরাপদ রাখাই অ‍্যাডামস্ প্রশাসনের মূল লক্ষ‍্য। তারই লক্ষ‍্যে, ইতোমধ‍্যে‌ই হাজার হাজার পুলিশ সদস্যকে রাস্তায় মোতায়েন করা হয়েছে, ২১ হাজারেরও বেশি অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র সন্ত্রাসীদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে এবং সাবওয়ে নিরাপদ করতে কাজ করে যাচ্ছে প্রশাসন। সেইসঙ্গে বিপদগ্রস্ত নিউইয়র্কবাসীদের প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানেও নানা কর্মসূচী গৃহিত হয়েছে।

অ‍্যাডামস্ বলেন, ‘পরিসংখ্যানগুলি এবং এই বছরের প্রথম ত্রৈমাসিক অপরাধের ডেটা দেখাচ্ছে যে আমাদের জনসুরক্ষা কৌশল কার্যকর হচ্ছে। ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে আমরা এখন পাঁচটি ধারাবাহিক ত্রৈমাসিক অপরাধ হ্রাস দেখেছি এবং আমরা অপরাধের রেকর্ড একের পর এক ভেঙে যাচ্ছি।’

বছরের প্রথম তিন মাসে গুলির ঘটনা ছিল ইতিহাসে সর্বনিম্ন। মডার্ন ট্র‍্যাকিং এ পরিসংখ্যান সংগ্রহ শুরু হওয়ার পর থেকে, শহরের কোনো একক ত্রৈমাসিকে কখনোই এত কম গুলির ঘটনা ঘটেনি। অ‍্যাডামস্ বলেন, ‘নিউইয়র্ক সিটিতে হত্যা মামলার সংখ্যাও ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। ছয় মাস ধরে টানা কমছে ডাকাতি ও বড় ধরনের চুরির ঘটনা, এবং ডাকাতির হার এখনো দ্বিগুণ হারে হ্রাস পাচ্ছে। পরিবহন ব্যবস্থায়ও প্রথম ত্রৈমাসিকে সমস্ত সাবওয়ে সুবিধা থাকা বরোতে দ্বিগুণ হারে অপরাধ হ্রাস পেয়েছে। ট্রেন ও প্ল্যাটফর্মে অধিক সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করার ফলেই এই অগ্রগতি সম্ভব হয়েছে। আমরা নিউইয়র্কবাসীর কথা শুনেছি এবং শহরকে নিরাপদ করে তুলতে নিরলসভাবে কাজ করেছি। আমাদের জননিরাপত্তা কৌশলের এই সাফল্যের মূল চাবিকাঠি হলো—পাঁচটি বরো জুড়ে চিহ্নিত হটস্পট এলাকায় পুলিশ মোতায়েন এবং তাতে জোরদার নজরদারি।’

তথ্যভিত্তিক ও নির্ভুল কৌশলে পরিচালিত পুলিশি তৎপরতা ২০২৫ সালেই ইতিমধ্যে ১ হাজার ৩০০-র বেশি অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র অপসারণে সফল হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ৫৭টি অচিহ্নিত থ্রিডি-প্রিন্টেড ঘোস্ট গান। অ‍্যাডামস্ প্রশাসনের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত রাস্তাঘাট থেকে মোট ২১ হাজারেরও বেশি অবৈধ অস্ত্র জব্দ করা হয়েছে।

অ‍্যাডামস্ বলেন, ‘এই অস্ত্র জব্দের সরাসরি প্রভাব পড়েছে গুলি সংক্রান্ত সহিংসতার উপর—শুধু মার্চ মাসেই গুলিবিদ্ধ ভুক্তভোগীর সংখ্যা প্রায় ২৯ শতাংশ কমেছে, এবং পুরো ত্রৈমাসিকে এই হ্রাস ২৩.৪ শতাংশ। অর্থাৎ, এই বছর এখন পর্যন্ত অন্তত ৫০ জন কম মানুষ গুলিবিদ্ধ হয়েছেন—যার মানে, আরও অনেক জীবন রক্ষা পাচ্ছে।’

অ‍্যাডামস্ যোগ করেন, ‘এবছরের শুরু থেকে খুচরা চুরির ক্ষেত্রে আশাব্যঞ্জক কিছু পরিসংখ্যান আমরা দেখতে পাচ্ছি—এই চুরি ৮ শতাংশেরও বেশি হ্রাস পেয়েছে। নিউইয়র্কবাসীরা স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন না যখন টুথপেস্ট থেকে শুরু করে লন্ড্রি ডিটারজেন্ট পর্যন্ত সবকিছু তালাবদ্ধ রাখতে হয়।’

প্রশাসনের গৃহীত পদক্ষেপগুলোর ফলস্বরূপ ২০২৫ সালের প্রথম ত্রৈমাসিকে সড়ক দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর সংখ্যা ঐতিহাসিকভাবে সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। ‌

অ‍্যাডামস্ বলেন, ‘গত তিন বছরে, প্রশাসনটি নিউইয়র্ক সিটির পাঁচটি বরো জুড়ে রেকর্ড ১৫ লাখ বর্গফুট নতুন পথচারী-উপযোগী এলাকা নির্মাণ করেছে; ৫ হাজার ৭০০-র বেশি রাস্তার মোড় উন্নত করা হয়েছে, যার ফলে দৃশ্যমানতা বেড়েছে এবং গাড়িচালকেরা মোড় ঘোরার সময় ধীরে চালাতে বাধ্য হচ্ছেন। সেই সাথে ৮৭.৫ মাইল সুরক্ষিত বাইক লেন বসানো হয়েছে; এবং যেহেতু সড়ক দুর্ঘটনার এক-চতুর্থাংশের বেশি ক্ষেত্রে অতিরিক্ত গতি দায়ী, আমরা আলবানি’র আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে কাজ করে স্পিড ক্যামেরা সপ্তাহে সাত দিন, দিনে ২৪ ঘণ্টা চালু রাখার ব্যবস্থা করেছি।’

তিনি বলেন, ‘রেডলাইট অমান্য করে চালকদের থামাতে বাধ্য করার জন্য রেড লাইট ক্যামেরার ব্যবহার সম্প্রসারণ করতে যাচ্ছি, এবং সেই লক্ষ্যে আলবানি’র সঙ্গে একসাথে কাজ করছি।’

এই পদক্ষেপগুলো চলতি ত্রৈমাসিকে সড়ক দুর্ঘটনায় আহতের সংখ্যাও কমিয়েছে এবং ‘ভিজন যিরো’ লক্ষ্য অর্জনের পথে এগিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে। পথচারী, সাইকেল চালক, মোটরচালিত টু-হুইলার ব্যবহারকারী এবং যাত্রীবাহী গাড়ির আরোহীদের মধ্যে আহতের হার সর্বত্র হ্রাস পাচ্ছে। তবে এই অগ্রগতির মাঝেও, অ‍্যাডামস্ যোগ করেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনা এখনও ট্র্যাজেডি ডেকে আনছে। যেমন সম্প্রতি ঘটে যাওয়া এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় দুই শিশুসহ তিনজন প্রাণ হারিয়েছেন এবং আরেক শিশু জীবন-মৃত্যুর লড়াই করছে হাসপাতালে। এই বাস্তবতা জানায়, গাড়ি চালানোর ধরন বদলানো এখনো কতটা জরুরি।’

জননিরাপত্তার প্রতি প্রশাসনটির অটল প্রতিশ্রুতি এবং এনওয়াইপিডি-এর সাহসী নারী-পুরুষদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলেই নিউইয়র্ক সিটি আজও আমেরিকার সবচেয়ে নিরাপদ বড় শহর-বলেন ‌‍অ‍্যাডামস্। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রতিদিন নিউইয়র্কবাসী, তাদের পরিবার, এবং আমাদের আশপাশের পাড়া-মহল্লাকে নিরাপদ রাখতে নিরলসভাবে কাজ করে যাবো।’

আরও পড়ুন

আরও সংবাদ